সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

কড়াইল বস্তিতে শিক্ষার ভরসা এনজিও

শিক্ষার হালচাল - ২

জয়শ্রী ভাদুড়ী

স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন সন্তান নিয়ে কড়াইল বস্তিতে একটি ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন জহুরা বেগম। এবার আট বছরে পা দিচ্ছে ছোট ছেলে মোকাম্মেল। তাকে একটি এনজিওর স্কুলে ভর্তি করাতে রীতিমতো তদবির করছেন জহুরা। অথচ সরকারি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষার্থী সংগ্রহের জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরতে হয় শিক্ষকদের। এর কারণ বস্তির এনজিওভিত্তিক স্কুলগুলোতে পড়াশোনার উপকরণ, স্কুলের পোশাক, টিফিনসহ বেশকিছু জায়গায় উপবৃত্তিও দেওয়া হয়। অথচ সরকারি স্কুলে বই ছাড়া আর কিছুই বিনামূল্যে পাওয়া যায় না, উপবৃত্তি তো অনেক দূরের কথা। সরেজমিন কড়াইল বস্তিতে দেখা যায়, ১৭টি এনজিওর কার্যক্রম চলমান রয়েছে ওই বস্তিতে। এর মধ্যে শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে ১৩টি। ব্র্যাক, দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, জাগো ফাউন্ডেশন, এডুকো, ঋক বাংলাদেশ, ব্যুরো বাংলাদেশ, সুরভী বাংলাদেশ, মানবিক সাহায্য সংস্থা, আইসিডিডিআরবি, আশা, ইএসটিসি, নগর দরিদ্র বস্তি উন্নয়ন সংস্থা, সেন্টার পর পলিয়েটিভ কেয়ারসহ আরও বেশ কিছু এনজিওর কার্যক্রম চলমান রয়েছে সেখানে। বিজয় বাংলা ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান কড়াইলের বাসিন্দা  এস এম মাহমুদুল হাসান বলেন, এ বছর কড়াইল বস্তি থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিএসসি) অংশগ্রহণ করেছে ১৩০০ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল ১৫ জন। বাকি সবাই এনজিও এবং অল্প কিছু বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের। শুধু এডুকো স্কুল থেকে ২০০ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। ব্র্যাক স্কুলের কড়াইল বস্তির চার ইউনিট থেকে ৮০ জনের মতো শিক্ষার্থী এ বছর পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। শতভাগ উত্তীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি জিপিএ-৫ পেয়েছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী। অথচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শ্রেণি মিলিয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ২৮৩। কড়াইল বস্তির এডুকো পাঠশালার প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসী আক্তার ঝুমা বলেন, আমি ১২ বছর ধরে এই বস্তির শিশুদের পড়াই। আমাদের এখানে শিশুদের ভর্তি করতে বাবা-মা আগ্রহী হলেও আমরা সবাইকে নিতে পারি না। শিক্ষা উপকরণ বিনামূল্যে দেওয়ার পাশাপাশি স্কুলের পোশাক, দুই দিন টিফিনও আমরা দিয়ে থাকি। আমরা প্রি-প্রাইমারি থেকে ভর্তি করি। ১৭ বছর ধরে চলা আমাদের এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাসের হার শতভাগ এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার দিকেও এগিয়ে তারা। এর বিপরীতে সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থী বিনামূল্যে বই দেওয়া ছাড়া আর কোনো সহায়তা পায় না। এ ব্যাপারে পল্লীবন্ধু এরশাদ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা খুবই কম। আমরা এক মাস প্রতি শিক্ষার্থীকে ১০০ টাকা করে উপবৃত্তি দিয়েছিলাম। কিন্তু স্কুল কমিটির কিছু জটিলতায় তা বন্ধ হয়ে গেছে। কড়াইল বস্তিতে ব্র্যাকের চারটি ইউনিটের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম চলে। সিলেবাসের বিষয়ে ব্র্যাকের দক্ষিণ বাড্ডা শাখার সিনিয়র শাখা ব্যবস্থাপক (শিক্ষা কর্মসূচি) নাসিরউদ্দিন বলেন, আমাদের ব্র্যাক স্কুলের কড়াইল এবং সাততলা বস্তি থেকে এ বছর ১১৮ জন পিএসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। প্রত্যেকেই ভালো মার্কস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। আমাদের এখানকার অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ঝরে পড়া। তাই তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত আমরা সহজভাবে তৈরি করা বই পড়াই। চতুর্থ আর পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সরকারি স্কুলের বই পড়ানো হয়। তিনি আরও বলেন, ব্র্যাকের স্কুল থেকে যেসব শিক্ষার্থী জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পায় তাদের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা ব্র্যাক থেকে দেওয়া হয়। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, এসএসসি এবং এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া ব্র্যাক স্কুলের শিক্ষার্থীকে বিনাবেতনে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু এসব সুযোগের কোনো কিছুই পায় না সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা। তাই এনজিওর ভরসাতেই চলছে কড়াইল বস্তির শিক্ষা কার্যক্রম।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর