শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

অর্ধশত বছরের প্রতিষ্ঠানেও নেই নিজস্ব জমি ভবন

শিক্ষার হালচাল ৬

মাহবুব মমতাজী

প্রতিষ্ঠার অর্ধশত বছর পরও কোনো কোনো বিদ্যালয়ের নেই নিজস্ব জমি ও স্থায়ী ভবন। খেলার মাঠ নেই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে। কোথাও কোথাও পরিত্যক্ত শ্রেণিকক্ষে চলছে পাঠদান। সামান্য বৃষ্টিতেই ভবনের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে ভিজে যায় মেঝে। কোনো কোনোটি ঝুঁকিপূর্ণ, ধসে পড়তে পারে যে কোনো সময়। কয়েকটি বিদ্যালয়ে নেই বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ। সাইনবোর্ড থাকলেও নেই বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব। শিক্ষার মান নিম্নমুখী বলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। স্বল্প আয়ের দিনমজুর শ্রেণির পরিবারের শিশুরাই প্রধানত শিক্ষার্থী। পুরান ঢাকা ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর এমন বেহালদশা লক্ষ্য করা গেছে। অবকাঠামোগত দুর্বলতার পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলোতে আছে শিক্ষক সংকট। পাঠদানে শিক্ষকদের উদাসীনতা দেখার কেউ নেই। বিভিন্ন এলাকার কমপক্ষে ৩০টি বিদ্যালয়ের সামনে রয়েছে ময়লার ভাগাড়, কিংবা প্রধান ফটকের সামনে বসছে হাটবাজার। দখল হয়ে আছে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার একমাত্র পথও। রাজধানীতে প্রায় ৩০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাত লাখের কাছাকাছি। বস্তির বাসিন্দা, রিকশাওয়ালা, ঠেলাগাড়িওয়ালা, পোশাককর্মীর মতো নিতান্তই স্বল্প আয়ের মানুষের সন্তানদের শিক্ষাদানের ঠিকানা বিদ্যালয়গুলো। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে সরকারের অনেক প্রতিশ্রুতিরই বাস্তবায়ন হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুরান ঢাকার নাজিরা বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ নেই। বিদ্যালয়ের সামনের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা। বিদ্যালয়ের নেই নিজস্ব ভবন ও জমি। কোতোয়ালির জিন্দাবাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ের নেই পাকা ভবন ও খেলার মাঠ। টিনশেডের আধাপাকা একটা বাড়ির ছোট ছোট তিনটি কক্ষে গাদাগাদি করে পাঠদান চলে। বৃষ্টি হলে কক্ষ ভিজে যায়। সূত্রাপুর ও কোতোয়ালি এলাকার কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা বেশি বেহাল। রোকনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল ভবনটি জরাজীর্ণ। এর পাশে দুই কক্ষবিশিষ্ট পিডিবির একটি নতুন ভবনে একই সঙ্গে পাঠদান ও দাফতরিক কাজ চলে। মাদারটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বাজারসংলগ্ন বলে এর সামনে প্রায় সব সময় ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। এ এলাকার আহম্মদবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে একটি ডোবা। এর থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়ায়। শ্রেণিকক্ষের পরিবেশও ভারী করে তোলে দুর্গন্ধ। বৃষ্টি হলে বিদ্যালয়ের মাঠে পানি জমে যায় বলে জানায় সেখানকার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মহিবুল হাসান। সূত্র জানায়, ডেমরার সারুলিয়া, কামারগোপ, কোতোয়ালির মাহুতটুলী রেনেসাঁ, ছোট কাটরা, হযরত নগর ও চম্পাতলী, গোয়ালঘাট, লালচান ও পাড়া ডগাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার সার্বিক পরিবেশও নাজুক। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করলেও অনেকে সন্তানকে নিজের বিদ্যালয়ের বাইরে বিভিন্ন বেসরকারি বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনে পড়ান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষকরা জানান, শুধু শিক্ষকের সংকট নয়, সরকারের জবাবদিহিতা ও সুষ্ঠু পরিচালনা নীতির অভাবে সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান একেবারে নিম্নমুখী। এসব বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ঝামেলা পোহাতে হয়।  আবুল কাশেম নামে এক অভিভাবক জানান, তিনি পেশায় ভ্যানচালক। মেয়েকে পড়ান জিন্দাবাহার স্কুলে। ভালো স্কুলে পড়ানোর সামর্থ্য নেই বলে ওই জরাজীর্ণ স্কুলেই ভর্তি করিয়েছেন। তবে একটু পড়ালেখা শিখলেই পড়ানো বাদ দিয়ে দিবেন।

সর্বশেষ খবর