শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
রূপগঞ্জে এমপি সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ

পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী নিহত

রূপগঞ্জের কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোড সড়কে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের অ্যাকশন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এমপি সমর্থিত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে সাংবাদিক, পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে সুমন (৩৭) নামে এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৫ শতাধিক রাউন্ড টিয়ার শেল ও গুলি বর্ষণ করে। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে উপজেলার হাবিবনগরের কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোডে ঘটে এ ঘটনা। নিহত সুমন মিয়া উপজেলার তারাব পৌরসভার গন্ধর্বপুর এলাকার মনু মিয়ার ছেলে। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াত নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করতে পারে— এ আশঙ্কায় পুলিশকে সহযোগিতা করতে হাবিবনগরের কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোডে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ শাহজাহান ভুঁইয়ার সমর্থিতরা অবস্থান নেন। সেখানে তারা প্যান্ডেল তৈরি করেন। একই স্পটে ৫০০ গজের মধ্যে অবস্থান নেন এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী সমর্থিত নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে এমপি সমর্থিত মুড়াপাড়া কলেজ ছাত্রদলের সাবেক এজিএস চাঞ্চল্যকর রাছেল হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তোফায়েল আহম্মেদ আলমাছ, চনপাড়ার বিউটি আক্তার কুট্টি, জাহেদ আলী ও তার লোকজন উসকানিমূলক স্লোগান দিয়ে কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোডে বের হন। পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরে যেতে আনুরোধ করে। তারা তা না শুনে উল্টো পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শটগান ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। শুরু হয় গাজী সমর্থিত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, ইটপাটকেল, টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও গুলি। দেড় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী সুমন নিহত হন। এ ছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফারুক আহাম্মেদ, রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন, ইন্সপেক্টর তদন্ত রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সদস্য মজিবুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক আশিকুর রহমান হান্নান, এস এম শাহাদাত হোসেন, সাইফুল ইসলাম, সুজন মিয়া, ছাত্রলীগ নেতা মুন্না, আওয়ামী লীগের আমির হোসেন, ওসমান, নবী হোসেন, দিগ্বিজয়, মহসিন, কবির, জাকির হোসেন, লোকমান হোসেন, আবদুল্লাহ বাকী, নিজাম উদ্দিন, রুবি, আমেনা, শরিফাসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ কেন্দ্র করে এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) ও কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোডে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল বাশার টুকু দাবি করেন, পুলিশের সঙ্গে এমপি গাজী সমর্থিতদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষকালে সুমন নামে এক ব্যক্তি মাথায় আঘাত পান। হাসপাতালে নেওয়া হলেও প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে মারা যান। রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন জানান, ৪৬৯টি শটগানের গুলি ও ৪০টি টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পুলিশের ওপর আক্রমণ হলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর