শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

টিকফার আদলে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি চায় ভারত

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

যুক্তরাষ্ট্রের টিকফার (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট) আদলে বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি করতে চায় ভারত। প্রস্তাবিত চুক্তিটির নাম হচ্ছে ‘কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সিপা)’। গতকাল বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ ধরনের চুক্তি করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে পার্শ্ববর্তী দেশটি। জবাবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চুক্তির খসড়া চাওয়া হয়েছে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী সচিব পর্যায়ের এই বৈঠকের গতকাল ছিল শেষ দিন। এতে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু এবং ভারতের পক্ষে দেশটির বাণিজ্য সচিব রিতা তিওতিয়া নেতৃত্ব দেন।

বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে দুই দেশের বেসরকারি কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে একটি যৌথ কমিটি গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। এ বিষয়ে ভারতের কাছে ধারণাপত্র চেয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া পেট্রাপোল থেকে বেনাপোলে ট্রেনে পণ্য পরিবহনের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। এটি হলে ভারতের রেল পণ্য নিয়ে সরাসরি বেনাপোলে প্রবেশাধিকার সুবিধা পাবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বলেছে, দুই দেশের মধ্যে দিনাজপুরের বিরল-রাধিকাপুর এবং রোহানপুর-সিনবাদের মধ্যে রেল সংযোগ চালু আছে। বেনাপোল-পেট্রাপোলে রেল সংযোগ চালুর বিষয়টিতে যেহেতু রেল মন্ত্রণালয় জড়িত, তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ভারতকে। বৈঠক প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) শফিকুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু ইস্যু ছিল গুরুত্বপূণ। এর মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের বিষয়ে একটি চুক্তির কথা জানিয়েছে ভারত। আমরা এ বিষয়ে খসড়া চেয়েছি।

খসড়া পাওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, বাংলাদেশে চিনি রপ্তানির বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভারত। বাংলাদেশ জানিয়েছে, দেশের সিংহভাগ চিনি আমদানি করে থাকে বেসরকারি খাত। তারা কোন দেশ থেকে চিনি আনবে সেটি তাদের বিষয়।

 বিষয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চায় না। বৈঠকে বাংলাদেশি কিছু পণ্যের ওপর আরোপিত এন্টি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হলে ভারত জানায়, বিষয়টি তাদের আদালতের মাধ্যমে নির্ধারণ হয়। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ট্যারিফ কমিশন ও বিএফটিআই-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়িয়ে এ ধরনের এন্টি ডাম্পিং শুল্ক বাধা দূর করার পরামর্শ দেয় ভারত। আলোচনার প্রথম দিন কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত। আর ভারতের পক্ষ থেকে আরও কিছু বর্ডার হাট স্থাপনের প্রস্তাব আসে। দুই দিনের এই সচিব পর্যায়ের বৈঠকে আরও যেসব ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে— বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত স্থল শুল্ক বন্দরসমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি; বর্ডার হাটের কার্যক্রম পর্যালোচনা ও নতুন বর্ডার হাট স্থাপন; বাংলাদেশের বিএসটিআইর সার্টিফিকেটের স্বীকৃতি প্রদান; পণ্য আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত বাণিজ্য বিরোধ ও জটিলতা দূর করা; স্থল শুল্ক বন্দরের মাধ্যমে অধিক সংখ্যক পণ্য আমদানির সুযোগ প্রদান এবং সড়ক ও রেলপথে পণ্য পরিবহন সুবিধা সম্প্রসারণ করা।

সর্বশেষ খবর