রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

দর্শনার্থী বেশি পাঠক কম

মোস্তফা মতিহার

দর্শনার্থী বেশি পাঠক কম

ছুটির দিনে গতকালও মেলায় অগণিত বইপ্রেমী বই কিনবেন এবং বইপ্রেমীদের সমাগম ও বিকিকিনিতে সফলতার দিকে মেলা একধাপ এগিয়ে যাবে— এমন ধারণা ছিল প্রকাশক ও লেখকদের। কিন্তু প্রকাশকদের হতাশ করেছেন দর্শনার্থীরা। প্রচুর            দর্শনার্থী মেলাপ্রাঙ্গণে এসেছিলেন, কিন্তু বইপ্রেমীরা খুব একটা আসেননি। যারা এসেছিলেন তার বেশির ভাগই খালি হাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেছেন, আবার খালি হাতেই মেলাপ্রাঙ্গণ ত্যাগ করেছেন। গতকাল এমনই ছিল গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণের চিত্র। বিকাল ৩টায় মেলার প্রবেশদ্বার খোলার পর খুব একটা লোকসমাগম লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু সময় যত বাড়তে থাকে ততই বাড়তে থাকে দর্শনার্থীর সংখ্যা। মেলায় যারা এসেছিলেন তার বেশির ভাগই প্রয়াত নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, গুলতেকিন খান প্রমুখের বই বেশি কিনেছেন। এদিন হুমায়ূন আহমেদের পুরনো বই ‘দেয়াল, জোছনা ও জননীর গল্প’, হিমুসমগ্র, মিসির আলিসমগ্র, জাফর ইকবালের নতুন বই ‘ত্রাতিনা’, ‘সাইক্লোন’, আনিসুল হকের ‘নন্দিনী’, ‘মা’ ইত্যাদি বই বেশি বিক্রি হয়েছে। সন্ধ্যায় মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে কথা হয় ইডেন কলেজের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী তানজিলা ইসলামের সঙ্গে। জানান, হুমায়ূন আহমেদের বই কেনার জন্যই তিনি মেলায় এসেছেন। হুমায়ূন আহমেদের ‘তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে’ ও ‘আঙুল কাটা জসলু’ বই দুটি কিনেছেন। সামনের দিনগুলিতে হুমায়ূন আহমেদের অন্য বইগুলো কিনবেন বলেও জানান এই তরুণী। মেলার অবকাঠামোগত পরিবেশ নিয়ে আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গনি বলেন, অপ্রয়োজনীয়ভাবে মেলার পরিসর বৃদ্ধি করা হয়েছে। যাদের স্টল দেওয়ার দরকার নেই তাদেরও স্টল দেওয়া হয়েছে। সিজনাল প্রকাশকের সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তিনি আরও বলেন, মেলায় স্টলগুলো বিচ্ছিন্নভাবে থাকায় পাঠকদের অনেক বিভ্রান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। ওসমান গনি বলেন, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি বাংলা একাডেমিকে ১ কোটি টাকার ওপরে দিয়েছে কিন্তু সেই টাকা কোথায় গেল? তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের শূন্যতায় লেখক সংকট তৈরি হয়েছে। যার কারণে অনেক প্রকাশক পুরনো বইগুলো নতুন মোড়কে বের করছেন। ২০ বছরের আগের বইও নতুন করে বের করা হচ্ছে বলেও জানান ওসমান গনি। প্রকাশনা সংস্থা ‘যুক্ত’র বিক্রয়কর্মী নাঈম জানান, তাদের প্রকাশনা থেকে এবারের মেলায় ৩০টি নতুন বই আসছে। যার মধ্যে ২০টি এরই মধ্যে চলে এসেছে। এর মধ্যে কবিতার বই সবচেয়ে বেশি।

গতকাল ছিল মেলার চতুর্থ শিশুপ্রহর। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রহরে বই কেনার পাশাপাশি দুষ্টুমি করে সময় কাটায় শিশুরা। এ ছাড়া অমর একুশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা। ক ও খ শাখায় ২৫০ জন শিশু-কিশোর অংশগ্রহণ করে। এরপর অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতা।

মির্জা মেহেদী তমালের ‘গোয়েন্দা কাহিনী’ : গতকাল দশম দিনে মেলায় এসেছে অপরাধবিষয়ক সাংবাদিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার মির্জা মেহেদী তমালের ‘গোয়েন্দা কাহিনী’। সত্য ঘটনা অবলম্বনে বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত লেখকের দেড় শ পর্বের লেখা থেকে নির্বাচিত বেশকিছু সিরিজ নিয়ে বইটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা অন্বেষা। মেলায় আসার পরই বইটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে বলে জানান প্রকাশক অন্বেষার স্বত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন। এবারের মেলায় ‘গোয়েন্দা কাহিনী’র প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। পরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড প্রকাশ হবে বলেও জানান শাহাদাত হোসেন। বইটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০ টাকা। দেশের সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামকে বইটি উৎসর্গ করেছেন লেখক মির্জা মেহেদী তমাল।

নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের তথ্যমতে, গতকাল দশম দিনে নতুন বই এসেছে ২২৫টি। এর মধ্যে সময় প্রকাশন এনেছে ফরিদ আহমেদের ‘হুমায়ূন আহমেদের উত্তরাধিকারী নির্ধারণ’, ঐতিহ্য এনেছে জাভেদ হোসেনের ‘মীর তকি মীর গজল থেকে’, জীবনানন্দ দাশের ‘কল্যাণী’, বাংলা একাডেমি এনেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘শওকত ওসমান জন্মশতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ’, নবযুগ এনেছে নরেশ ভূঁইয়ার ‘দীপার সারাবেলা’, ফরিদুর রেজা সাগরের ‘সিঙ্গাপুরের ডালপুরী ও ছয় ফিলিপ’, ইমদাদুল হক মিলনের ‘একটি রহস্য উপন্যাস’।

মূলমঞ্চ : বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘রবি গুহ মুনীর চৌধুরী সরদার ফজলুল করিম’ শীর্ষক আলোচনা সভা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মফিদুল হক ও অধ্যাপক এম এম আকাশ। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল, অজয় দাশগুপ্ত, পিয়াস মজিদ ও অলকানন্দা গুহ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সন্জীদা খাতুন। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতি, শফি মণ্ডল, রণজিৎ দাস বাউল, পাগলা বাবলু, মো. আনোয়ার হোসেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর