রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

খুনিরা কি কোনো দিন ধরা পড়বে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুনিরা কি কোনো দিন ধরা পড়বে?

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার ছয় বছর পেরুলো, কিন্তু কেউ এখনো জানে না কারা খুন করেছে কিংবা কেন করেছে। হত্যা ঘটনার তদন্তে অগ্রগতি না থাকায় নিহতদের পরিবার হতাশ। এই দুটি পরিবারে এখন বিচার পাওয়া না পাওয়ার প্রশ্নেই সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড মামলার তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব দাবি করছে, তাদের তদন্তে কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। কিন্তু আদালতের কাছে এ পর্যন্ত ৫৪ বার সময় নেওয়ার পরও র‌্যাব তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। সর্বশেষ চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের দিন নির্ধারণ করা ছিল। কিন্তু সেদিনও জমা দিতে পারেনি র‌্যাব। ঢাকার মহানগর হাকিম বেগম মাহমুদা আক্তার আগামী ১৩ মার্চ প্রতিবেদন দাখিলের নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন।

ঢাকার অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার আনিসুর রহমান জানান, আদালতে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সহকারী পুলিশ সুপার ওয়ারেছ আলী মিয়া তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না করায় বিচারক এ আদেশ দেন। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। পরের দিন ভোরে তাঁদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রুনির ভাই বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা করেন। মামলার পর রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমানসহ  মোট আটজনকে আটক করা হয়। বাকিরা হলেন রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল, তানভীর, আবু সাঈদ ও বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির। এর মধ্যে পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান জামিনে রয়েছেন।

হত্যাকাণ্ডের পর ছয় বছরে তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। এমন পরিস্থিতিতে সান্ত্বনা পাওয়ার পথও খুঁজে পাচ্ছে না সাংবাদিক দম্পতির বিপর্যস্ত পরিবার দুটো। মেহেরুন রুনির ভাই নওশের রোমান বলেন, তাদের মাঝে একদিকে রয়েছে শূন্যতা, অন্যদিকে হতাশা তৈরি হচ্ছে। সাগর-রুনির শিশু সন্তান মেঘ বড় হচ্ছে। যখন সে বুঝতে শিখবে, নির্মমভাবে বাবা-মা হারানোর ঘটনাটি তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব কতটা ফেলবে, সেটা নিয়েই আমরা পরিবারের সদস্যরা এখন শঙ্কিত।” ছয় বছর আগে হত্যাকাণ্ডের পর পরই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে  গ্রেফতার করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু ঘণ্টা, দিন, মাস, বছর অনেক সময় পার হয়ে গেছে। নওশের রোমান বলেন, ছয় বছরেও তদন্তকারীরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না। র‌্যাবকে প্রশ্ন করলে একই জবাব পাওয়া যায় যে, তারা  দেখছে, তদন্ত করছে। তদন্তে ডিবি পুলিশ ব্যর্থ হওয়ার কথা স্বীকার করলে হাই কোর্টের নির্দেশে র‌্যাব তদন্তের দায়িত্ব পায়। র‌্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে। ডিআরইউ এর কর্মসূচি : আজ রবিবার বেলা ১১টায় সাগর-রুনি হত্যার ষষ্ঠ বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) চত্বরে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সমাবেশে সাগর-রুনি পরিবারের সদস্য, গণমাধ্যমের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা ও সর্বস্তরের সাংবাদিক উপস্থিত থাকবেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন আলামতের ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে। গ্রিল কাটা এবং বিভিন্ন চোর ডাকাত, এ রকম সন্দেহভাজন ১৩০ জনের মতো ব্যক্তিকে সন্দেহ করে তদন্ত করা হয়েছে। ঘটনার সময় হারানো ল্যাপটপ এবং মোবাইল  ফোনের ব্যাপারেও র‌্যাব বিটিআরসির সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। এগুলো কেউ চালু করলেই সন্ধান পাওয়া যাবে। বিভিন্ন বিষয়ই তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তবে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা গেছে কিনা বা কবে নাগাদ তদন্ত  শেষ হতে পারে, এত বছর পরও এসব প্রশ্নের কোনো জবাব মিলছে না।

সর্বশেষ খবর