মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স

দেশের মাদকের ভয়াবহ বিস্তার নিয়ে সরকারের ভিতরেই অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। মাদকের ভয়াবহ ছোবলে পুরো দেশ এবং একটা প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এমন আতঙ্কের কথাই নিজেদের বক্তব্যে তুলে ধরেছেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী। গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই অস্বস্তি এবং আতঙ্কের কথা প্রকাশ করেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। একই সঙ্গে কমিটির সদস্যরা বলেছেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। দলমত নির্বিশেষে মাদকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির গতকালের ১৮তম বৈঠকে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল মাদকের ওপর। ছিল সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে পুরো বৈঠকের সিংহভাগ সময় জুড়েই আলোচনা হয়েছে দেশব্যাপী মাদকের বিস্তার নিয়ে। মন্ত্রীরা প্রায় প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ এলাকার চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, পুরো দেশ এখন মাদকে ছেয়ে গেছে। আনাচে-কানাচে সর্বত্রই ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদক দ্রব্য সহজেই নাগালের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এই মাদকের কারণেই দেশের একটা জেনারেশন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। গ্রামে গঞ্জে পৌঁছে গেছে মাদকের ভয়াবহতা। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মাদকের আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রীদের কেউ কেউ বলেছেন, খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও জড়িত রয়েছে বলে বিভিন্ন পর্যায়ে অভিযোগ আছে। এই অবস্থায় যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে যায় তাহলে মাদক রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এটা আমাদের জন্য আতঙ্কের। বৈঠকে মন্ত্রীরা বলেছেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে একেবারে মাঠপর্যায় থেকে শহর পর্যন্ত সর্বত্র অভিযান চালাতে হবে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মাদকের এই ছোবল ঠেকাতে মাদকসেবীর চেয়ে বেশি নজর দিতে হবে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি। যারা মাদককে গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনের আওতায় এনে তাদেরকে কঠোর সাজা দিতে হবে। সে যেই দলের সমর্থক হোক না কেন কোনোভাবেই যেন পার না পেয়ে যায় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মাদক ব্যবসার সঙ্গে যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যও জড়িত থাকে বা তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই ওই সদস্যকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ মাদক ব্যবসার সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত হওয়ার সাহস না পায়। এদিকে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মাদকের বিস্তার রোধে সারা দেশে মাদকের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান পরিচালনা করবে সরকার। গতকালের বৈঠক থেকে এ ব্যাপারে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। অবশ্য এই অভিযান কবে থেকে শুরু হবে সে ব্যাপারে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে খুব শিগগির এই অভিযান শুরু হবে।

এদিকে বৈঠক শেষে শিল্পমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করছে। সব তালিকা সমন্বয় করে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, আমরা বিশেষভাবে মাদকের ব্যাপারে কনসার্ন। মাদক পাচার, মাদক ব্যবসায়ী, গডফাদার-সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দেওয়া তালিকার ভিত্তিতে মোট ৮৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৮ জন জেলহাজতে আছে। এটার ব্যাপারে আরও তৎপর হওয়ার বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আগামীতে তৎপরতা আরও বাড়বে। আমু বলেন, গত ডিসেম্বর মাসে মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী মিলে মোট ১০ হাজার ১২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। আমরা মাদকের বিষয়ে জোর দিচ্ছি। জঙ্গি ব্যাপারটা মোটামুটি একটা নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে আছে। এখন মাদকটা যাতে আর বিস্তার লাভ করতে না পারে সেটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছি।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, আমরা কতগুলো কর্মপন্থা নিচ্ছি। জনগণসহ স্কুল কলেজের শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করতে চাই। শিক্ষকরা ক্লাসে এ বিষয়ে বক্তব্য দেবেন। মসজিদে খুত্বার আগে বয়ানে যাতে ইমাম সাহেবরা মাদকের ক্ষতির জিনিসটা তুলে ধরেন। যাতে একটা সামাজিক বিপ্লব হয়। এগুলো যাতে কার্যকর হয় সেজন্য মনিটরিংও করা হবে।

এ ছাড়া বৈঠকে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, তুলনামূলক অপরাধ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, ডাকাতি, দস্যুতা, খুন, অপহরণ ও চুরি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলার যথেষ্ট উন্নতি সাধন হয়েছে।

শিল্পমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারীসহ অন্যরা।

সর্বশেষ খবর