শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

অনলাইনে জঙ্গিবাদে জড়ান দুই বোন সোমা ও সুমনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মোমেনা সোমা ও আসমাউল হুসনা সুমনা। এই দুই বোন সেলফ রেডিকালাইজড (স্বতন্ত্র জঙ্গি)। তারা অনলাইনে জঙ্গিবাদের বিভিন্ন উপকরণ দেখে এ কাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তবে দেশের কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাদের এখন পর্যন্ত কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এসব বলেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। মোমেনা সোমা আগে নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার ছোট বোন আসমাউল হুসনা সুমনা ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির একই বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। পরবর্তীতে সোমা মাস্টার্স কোর্সের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে সেদেশের পুলিশ। গত সোমবার রাতে রাজধানীর কাজীপাড়ায় তাদের বাসায় তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য গেলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক সদস্যের ওপর ছুরি নিয়ে হামলার চেষ্টা চালান সুমনা। এ           ঘটনায় সুমনাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়েছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। বড় বোনের মাধ্যমে সুমনা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা সুমনাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর এ তথ্য পান। মনিরুল ইসলাম জানান, মোমেনা গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে অস্ট্রেলিয়া পুলিশের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। ২০১৫ সালে অনলাইনে আইএস-আল কায়েদাসহ জঙ্গিদের ছড়িয়ে রাখা বিভিন্ন উপকরণ দেখে নিজেরা উদ্বুদ্ধ হয়ে এ পথে আসেন সোমা। তিনি তুরস্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভিসা না পাওয়ায় তার যাওয়া হয়নি। এরপর ২৫ শতাংশ স্কলারশিপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যান। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে এ ধরনের অঘটন ঘটানোর কথা আগেই ছোট বোনকে বলে গিয়েছিলেন তিনি। আর বাসায় পুলিশ এলে তাদের ওপর হামলা করার নির্দেশও ছোট বোনকে দেন তিনি। দেশের কোনো জঙ্গি সংগঠন বা ব্যক্তির সঙ্গে দুই বোনের যোগাযোগ ছিল কিনা— এমন প্রশ্নে মনিরুল বলেন, কোনো জঙ্গি সংগঠন বা হোলি আর্টিজানে হামলাকারীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

 তবে ২০১৪ সাল থেকে নিখোঁজ থাকা এবং জঙ্গিবাদে জড়িয়ে সিরিয়ায় চলে যাওয়া নজিবুল্লাহ আনসারীর সঙ্গে সোমার সম্পর্ক ছিল। তাদের বিয়ে হওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু নজিবুল্লাহর পরিবার রাজি না থাকায় সেই বিয়ে হয়নি।  তিনি ধারণা করেন, ওই সময়ই সোমা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন এবং ২০১৫ সালে সোমার মা মারা যাওয়ার পর তার ভেতরে জঙ্গিবাদ আদর্শ আরও তীব্র হয়। জানা গেছে, নজিবুল্লাহ রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর মালয়েশিয়ান মেরিন একাডেমিতে পড়তে যান। সেখান থেকে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৬ সালে তার সঙ্গে পরিবারের শেষ যোগাযোগ হয়। জঙ্গিবাদের মোহ থেকে ফিরে আসা গাজী সোয়ান পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তুরস্কে নজিবুল্লাহর সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। কিন্তু পরে বারবার চেষ্টা করেও তিনি আর নজিবুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। সোয়ানের ধারণা, নজিবুল্লাহ তুরস্ক সীমান্তে মারা গেছেন।

সর্বশেষ খবর