শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রশ্ন করেন গাইড বই থেকে

শিক্ষকরাই বোঝেন না সৃজনশীল

শিক্ষার হালচাল - ১৩

আকতারুজ্জামান

পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে এসে শিক্ষার্থীদের ‘বুঝে পড়া’ উৎসাহিত করতে গত ২০০৮ সালে চালু করা হয় সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি। বলা হয়েছিল, সৃজনশীল প্রশ্নের গঠনকাঠামো শিক্ষার্থীর পরীক্ষাভীতি দূর করবে। কিন্তু সৃজনশীল নিয়ে খোদ শিক্ষকদেরই ভীতি কাটেনি। শিক্ষকদের বড় অংশ সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদান করতে গিয়ে শেখাতে পারছেন না ছাত্র-ছাত্রীদের। প্রশ্ন তৈরি করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেরা প্রশ্ন করতে না পেরে বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করছে। আবার কোনো কোনো শিক্ষক গাইড বই থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দিয়ে নিচ্ছেন সৃজনশীলের পরীক্ষা। ২০১৬ সালে কুমিল্লা বোর্ডের জেএসসি বাংলা প্রথম পত্রের সৃজনশীল প্রশ্ন হুবহু গাইড বই থেকে কপি করে পরীক্ষা নেওয়ার প্রমাণ মেলে। শিক্ষাবিদরাও বলছেন, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাবে শিক্ষকরাই বুঝছেন না সৃজনশীল। শিক্ষকদের বড় অংশের কারণে মাঠেই মারা যাচ্ছে এই শিক্ষা পদ্ধতি। ভেস্তে যাচ্ছে সৃজনশীল পদ্ধতির উদ্দেশ্য। শিক্ষকদের এ পদ্ধতিতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না দেওয়ায় সৃজনশীল চালু হওয়ার ১০ বছর পরও এই পদ্ধতি চলছে জোড়াতালি দিয়েই।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, সৃজনশীলে শিক্ষকরা দক্ষ নন এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই। সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে অনেক শিক্ষকের ধারণাই নেই। শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীলতার শিক্ষা দিতে পারছেন না।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) সর্বশেষ ‘একাডেমিক সুপারভিশন প্রতিবেদন’-এ দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেরা সৃজনশীলের প্রশ্ন প্রণয়ন করছে না। সারা দেশে ১৮ হাজার ৫৯৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। গত বছর মে মাসে দেশের ৯টি শিক্ষা প্রশাসনিক অঞ্চলের ৬ হাজার ৪৪২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সুপারভিশন করে এই প্রতিবেদন করা হয়েছিল। প্রতিবেদনটিতে দেখা গেছে, সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে ছিল বরিশাল। এ অঞ্চলের ৫৪৩টি বিদ্যালয়ে সুপারভিশন করে দেখা গেছে, ৪৯৯টি বিদ্যালয়ই বাইরে থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করেছে। শতাংশ হিসেবে এর হার ৯১ দশমিক ৯০ শতাংশ। ১৭টি স্কুল অন্য বিদ্যালয়ের সহায়তায় প্রশ্ন প্রণয়ন করেছে। মাত্র ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ শিক্ষক নিজেরা সৃজনশীলের প্রশ্ন প্রণয়ন করেন। সৃজনশীলের প্রশ্ন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল রাজশাহী বিভাগ। ৯২০টি স্কুলে সুপারভিশন করে দেখা গেছে, ৭৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নিজেরা প্রশ্ন প্রণয়ন করেছেন। শতাংশ হিসেবে এর হার ৭৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ অঞ্চলের ৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাইরে থেকে সৃজনশীলের প্রশ্ন সংগ্রহ করেছে। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ঢাকা অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্য বিদ্যালয়ের সহায়তায় প্রশ্ন প্রণয়ন করে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ মাধ্যমিক স্কুল, বাইরে থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করে ৯ দশমিক ২২ শতাংশ।

সর্বশেষ খবর