শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঠাকুরগাঁওয়ে সোলার প্যানেল সেচ

আবদুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁওয়ে সোলার প্যানেল সেচ

একসময় ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে ধান উৎপাদন ব্যাহত হলেও এখন আর সেই দুশ্চিন্তা নেই ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকের। হাতের নাগালে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সেচসুবিধা পাওয়ায় খরা মৌসুমেও স্বচ্ছন্দে ধান আবাদ করছেন কৃষক। আর কৃষি বিভাগ বলছে সেচব্যবস্থা সুবিধাজনক হওয়ায় ধান উৎপাদনের        লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সবসময় এগিয়ে উত্তরের এ জেলা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল, হরিপুর, বালিয়াডাঙ্গী ও সদর— এ পাঁচ উপজেলায় চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬০ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে; যা থেকে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন। গত মৌসুমে ৫৯ হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৪১ হাজার ২১০ মেট্রিক টন ধান।

জেলার কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার ভেলাজান ইউনিয়ন ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পারিয়া ইউনিয়নের চাষিরা সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সেচ দিয়ে মাঠের পর মাঠ বোরো আবাদের জন্য তৈরিতে ব্যস্ত। ভালো দাম পাওয়ার আশায় সময়মতো ধান উৎপাদনে কেউ সেচ দিচ্ছেন, কেউ আবার জমি চারা রোপণের উপযোগী করে তুলছেন।

ভেলাজান ইউনিয়নের মোলানী গ্রামের সোলায়মান আলী কৃষকের সেচব্যবস্থায় ভ্রাম্যমাণ সোলার প্যানেলের প্রথম উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। তিন বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে সোলারের মাধ্যমে মোটর দিয়ে প্রথমে নিজ জমিতে সেচব্যবস্থা চালু করেন। পরে স্থানীয় কৃষক তা দেখে উদ্বুদ্ধ হন। এরপর জেলার কৃষকের মাঝে তা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শুধু সোলায়মান আলীর কাছ থেকে ১৯টি সোলার প্যানেলের সেচ পাম্প কিনেছেন জেলার কৃষক। একসময় কৃষক স্যালো মেশিনের ওপর নির্ভর ছিলেন। অন্যদিকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় সেচসুবিধা থাকলেও হয়রানির শিকার হতো মানুষ। আর বিদ্যুৎ দিয়ে সেচসুবিধা নিতে হলেও খরা মৌসুমে শুরু হয় ঘন ঘন লোডশেডিং। সবকিছু বিশ্লেষণ করে কৃষক মনে করছেন সোলারে সেচব্যবস্থা সুবিধাজনক। তাই এটি এখন জনপ্রিয়। সদর উপজেলার মোলানী গ্রামের মজিবর রহমান, আইয়ুব আলী, মোকলেসুর রহমানসহ অনেক কৃষক জানান, আগে বোরো মৌসুমে সেচ নিয়ে কৃষককে বিপাকে পড়তে হতো। এখন ভ্রাম্যমাণ সোলারের সেচব্যবস্থায় অনেক সুবিধা পাচ্ছেন কৃষক। এতে লাভবান হচ্ছেন তারা। আগে একটি স্যালো ১৫-২০ হাজার টাকায় কিনে সেচ দিতে হতো। এতে তেল কেনা, মেশিন আনা-নেওয়া, চুরি ও নষ্ট হওয়ারও ভয় থাকত। এখন তা হচ্ছে না।

বর্তমানে ১ বিঘা জমিতে ভ্রাম্যমাণ সোলার প্যানেল দিয়ে ধান উৎপাদনে খরচ হচ্ছে মাত্র ২৫০০ টাকা। আর স্যালো দিয়ে সেচ দিতে খরচ হচ্ছে ৪-৫ হাজার টাকা। ভোগান্তি তো রয়েছেই। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মাউদুদুল ইসলাম চলতি বোরো মৌসুমে জেলার কতগুলো ভ্রাম্যমাণ সোলার প্যানেলে সেচসুবিধা চালু রয়েছে তার পরিসংখ্যান দিতে না পারলেও জানান, ‘এখন সেচসুবিধা মানুষের হাতের নাগালে রয়েছে। সেচ নিয়ে আর ভোগান্তি নেই কৃষকের। জেলার পাঁচটি উপজেলায় সোলার পাম্পের মাধ্যমে সেচব্যবস্থা নিয়ে কৃষক এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। আশা করছি চলতি মৌসুমেও আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।’

সর্বশেষ খবর