মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাঁচ জানুয়ারির মতো হলে অংশ নেব না

—— পীর চরমোনাই

পাঁচ জানুয়ারির মতো হলে অংশ নেব না

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর চরমোনাই বলেছেন,আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৫ জানুয়ারির মতো হলে ইসলামী আন্দোলন তাতে অংশ নেবে না। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার তো জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়। প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতা ধরে রেখেছে। ক্ষমতায় থাকারই কোনো নৈতিক  ভিত্তি নেই তাদের। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় একথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস, সরকারের সফলতা-ব্যর্থতাসহ নানান বিষয়ে কথা বলেন। ইসলামী আন্দোলনের সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে পীর চরমোনাই বলেন, দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো। উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ছাড়িয়ে এখন ওয়ার্ড পর্যায়ে সংগঠনের কার্যক্রম সম্প্রসারিত হচ্ছে। দেশের অনেক অঞ্চলে ওয়ার্ড পর্যায়ে কার্যক্রম থেমে না থেকে পাড়া-মহল্লা ভিত্তিক এবং ভোট কেন্দ্রভিত্তিক কার্যক্রম বিস্তৃত হচ্ছে। ক্রমেই সংগঠন তৃণমূলে শক্তিশালী হচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি অনেক দূর এগিয়েছে। আসনভিত্তিক কার্যক্রম এবং প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি সবকটি আসনেই ইসলামী আন্দোলন তার নিজস্ব প্রতীক হাতপাখা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রীর অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে অংশ নেবেন কি না— এমন প্রশ্নে পীর চরমনোই বলেন, সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। নির্বাচনের আগে কোনো জোটে যাবেন কি না বা আপনার নেতৃত্বে জোট গঠন করবেন কি না—জানতে চাইলে পীর চরমোনাই বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন গতানুগতিক কোনো জোট গঠনে বিশ্বাসী নয়। এটি একটি ঐক্যপ্রয়াসী সংগঠন। ফলপ্রসূ ঐক্যবদ্ধ কোনো আদর্শিক প্লাটফর্ম তৈরি হলেই কেবল ইসলামী আন্দোলন জোটে যাবে। ইসলামী আন্দোলন রাজনীতিতে গুণগত ও আদর্শিক পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে। এ ছাড়া সবগুলো দল কোনো না কোনো জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ ক্ষেত্রে বিকল্প জোট কাকে নিয়ে করব? এক প্রশ্নের জবাবে পীর চরমোনাই বলেন, নৈতিকতার চরম অবক্ষয়ের কারণেই মানুষ অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। নৈতিক শিক্ষার অভাবে নারী নির্যাতনসহ অপরাধ বাড়ছে। পর্দার বিধানের প্রতি অবহেলার কারণেও নারী নির্যাতন, ইভ টিজিং, ধর্ষণ বেড়েই চলেছে। ইসলামই নারীদের প্রকৃত মর্যাদা দিয়েছে। কোরআনে বর্ণিত নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করলেই নারী নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে পীর চরমোনাই বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। মানুষ চরম উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠার সঙ্গে দিনাতিপাত করছে। কখন কাকে গুম-খুনের শিকার হতে হয়, এ নিয়ে জনগণ শঙ্কিত। শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে পীর চরমোনাই বলেন, নৈতিকতাবিবর্জিত শিক্ষাব্যবস্থা যুবসমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। ইসলামী শিক্ষার বারোটা বাজিয়েছে এ সরকার। বিএনপির রাজনীতি কোনদিকে যাচ্ছে জানতে চাইলে পীর চরমোনাই বলেন, সর্বশেষ বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতের মাধ্যমে কারাবন্দী করায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটু ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে। তাছাড়া দল পরিচালনায় সব দলেরই নিজস্ব পলিসি আছে। আর সে পলিসি অনুযায়ী দল পরিচালনা করে থাকেন। বিএনপির ক্ষেত্রেও তাই। তারা তাদের পলিসি অনুযায়ীই অগ্রসর হচ্ছে। তবে আমার মনে হয় বিএনপি এখনো অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়নি। সামগ্রিক ইস্যুতে ইসলামী দলগুলোর কী করা উচিত—জানতে চাইলে পীর চরমোনাই বলেন, ইসলামপন্থি দলগুলো ইসলাম প্রতিষ্ঠার চিন্তা নিয়ে কাজ করলে দেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা হতে বেশি সময় লাগত না। এ ছাড়া দেশের সামগ্রিক ইস্যুতে বিশেষ করে ইসলাম প্রশ্নে এবং রাষ্ট্রের কল্যাণে ইসলামী দলগুলোকে আরও দূরদর্শী হওয়া উচিত। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মানুষের সার্বিক কল্যাণে ইসলামের সুমহান আদর্শের আলোকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর