মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

জঙ্গি বিজয় কুপিয়ে মাটিতে ফেলেন, গলা কাটেন মাসুদ

রংপুরে খাদেম হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

পীরবাদে বিশ্বাসী হওয়ায় রংপুরে মাজারের খাদেম রহমত আলীকে হত্যা করে জঙ্গিরা। জেএমবির উত্তরাঞ্চলের কমান্ডার বিজয় ওরফে আলী ওরফে দর্জি প্রথমে ধারালো ছোরা দিয়ে কুপিয়ে খাদেম রহমত আলীকে মাটিতে ফেলে দেন। এরপর রংপুর আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানা ওরফে মামুন ওরফে মন্ত্রী ছোরা দিয়ে গলা কেটে খাদেমকে হত্যা করেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন মামলার তিন তদন্ত কর্মকর্তা। এরা হলেন রংপুরের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আরমান হোসেন, কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন অর রশীদ ও কাউনিয়া থানার তৎকালীন এসআই মনোরঞ্জন রায়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা জানান, রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকারের আদালতে গতকাল খাদেম হত্যা মামলায় চারজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে তিন তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যে এ তথ্য পাওয়া যায়। আইনজীবী রথীশ জানান, মামলাটি প্রথমে কাউনিয়া থানার এসআই মনোরঞ্জন রায় তদন্ত করেন। তিনি বদলি হলে ওই থানার বর্তমান ওসি মামুন অর রশীদ তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। কিন্তু বাদীপক্ষের নারাজিতে হাই কোর্টের নির্দেশে মামলাটি পুনঃতদন্ত করে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন রংপুরে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আরমান হোসেন। 

রথীশ জানান, তিন তদন্ত কর্মকর্তা আলাদাভাবে সাক্ষ্য দিলেও তাদের তিনজনই আদালতকে জানিয়েছেন, জেএমবির রংপুরের আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানা ওরফে মামুন ওরফে মন্ত্রীর নেতৃত্বে জেএমবির ১৩ সদস্য তিন মাস ধরে রংপুর নগরীতে বাসা ভাড়া নিয়ে মাজারের  খাদেম রহমত আলীকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটেন। জেএমবির উত্তরাঞ্চলের কমান্ডার বিজয় ওরফে আলী ওরফে দর্জি প্রথমে ধারালো ছোরা দিয়ে খাদেম রহমত আলীকে মাটিতে ফেলে দেন। এরপর রংপুর আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানা ওরফে মামুন ওরফে মন্ত্রী ছোরা দিয়ে গলা কেটে খাদেমকে হত্যা করেন। পরে তারা একটি অটোরিকশায় মাসুদের রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী ইউনিয়নের পশুয়া টাঙ্গাইলপাড়া এলাকার নিজ বাড়িতে যান। হত্যায় ব্যবহৃত তিনটি ছোরা মাসুদের বাড়ির পাশের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। খাদেম রহমতকে হত্যার ২২ দিন পর ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর মাসুদকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে তার দেওয়া তথ্যে খাদেম হত্যায় ব্যবহৃত তিনটি ছোরা মাসুদের বাড়ির পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়।

এ ছাড়াও বিচারিক হাকিম দেবাংশু কুমার সরকারেরও সাক্ষ্য নেওয়া হয়। সাক্ষ্য শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের জেরা করেন বলে আইনজীবী রথীশ জানান। এ নিয়ে এ মামলায় ৫২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হলো। একজন সাক্ষী মারা গেছেন। অপর দুজন সাক্ষী ভারতে চলে গেছেন। ফলে আদালত এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করে দিয়ে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ফৌজদারি ৩৪২ ধারায় আসামিদের পরীক্ষা করার দিন ধার্য করে দেন। সাক্ষ্য গ্রহণের সময় ১৩ আসামির মধ্যে কারাগারে থাকা ১১ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এরা হলেন- জেএমবি রংপুর অঞ্চলের কমান্ডার মাসুদ রানা ওরফে মামুন ওরফে মন্ত্রী (৩৩), সদস্য ইছাহাক আলী (৩৪), লিটন মিয়া ওরফে রফিক (৩২), সাখাওয়াত হোসেন ওরফে রাহুল (৩০), আবু সাঈদ (৩০), তৌফিকুল ইসলাম সবুজকে (৩৫), সরওয়ার হোসেন সাবু ওরফে মিজান (৩০), সাদাত ওরফে রতন মিয়া (২৩), জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী (২৬), বাবুল আখতার ওরফে বাবুল মাস্টার (৩৫) ও উত্তরাঞ্চলের কমান্ডার বিজয় ওরফে আলী ওরফে দর্জিকে (৩০) আদালতে হাজির করা হয়। পলাতক রয়েছেন রাজিবুল ইসলাম মোল্লা ওরফে বাদল ওরফে বাঁধন (২৫) ও চান্দু মিয়া (২০)। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের চৈতার মোড়ে মাজার শরিফের খাদেম রহমত আলীকে (৬০) ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর রাতে বাড়ি ফেরার সময় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার ছেলে অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। কাউনিয়া থানার ওসি মামুন অর রশীদ গত বছরের ৩ জুলাই জেএমবির রংপুর আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানা ওরফে মামুন ওরফে মন্ত্রীসহ ১৪ জেএমবির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। দুই আসামির মৃত্যু হওয়ায় তাদের বাদ দিয়ে গত বছরের ১৬ আগস্ট রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকার জেএমবির ১২ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। সম্পূরক অভিযোগপত্রে জেএমবির উত্তরাঞ্চলের কমান্ডার বিজয় ওরফে আলী ওরফে দর্জিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সর্বশেষ খবর