মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বেতন না পেতেই শেষ হচ্ছে চাকরির মেয়াদ!

শিক্ষার হালচাল ১৭

আকতারুজ্জামান

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার সুবর্ণখুলি এলএসএস বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধরনী মোহন রায়। ১৯৮৬ সালের ২০ জানুয়ারি স্কুলটিতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। বয়স ৫৭ ছুঁই ছুঁই। চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে। তার চাকরির বয়স আছে আর মাত্র প্রায় তিন বছর। এরপরই অবসরে যেতে হবে তাকে। কিন্তু এখনো তার প্রতিষ্ঠানটি সরকারিকরণ হয়নি। তাই পাচ্ছেন না কোনো বেতন-ভাতাও। এ পরিস্থিতিতে ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে তাকে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে অভাব-অনটনে। সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কথা হয় এ শিক্ষকের সঙ্গে। আর কয়েক বছর চাকরির বয়সের কথা জানিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। ধরনীর শঙ্কা, সরকারের কাছ থেকে বেতন-ভাতা পাওয়ার আগেই কী তাকে অবসরে যেতে হবে? শুধু ধরনী মোহনই নয়, বেসরকারি অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই চাকরির বয়সের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। কবে তাদের স্কুলগুলো সরকারি করা হবে সে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তারা।

হবিগঞ্জের হরিপুর রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. শাহজাহান মিয়া। ১৯৯৫ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হওয়ার পর ১৯৯৭ সাল থেকে এ স্কুলটিতে চাকরি করে আসছেন। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২০০ ছাত্র-ছাত্রী আছে স্কুলটিতে। কিন্তু জাতীয়করণের তালিকায় এ স্কুলটি নেই। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বেতন-ভাতাই পাচ্ছেন না তিনিও। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শাহজাহান মিয়ার মতো হাজার হাজার শিক্ষককে। তথ্যমতে, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করে সরকার। কিন্তু এখনো জাতীয়করণের বাইরে রয়ে গেছে প্রায় ৪ হাজার ১৫৯টি বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জানা গেছে, এসবের অনেক বিদ্যালয় যাচাই-বাছাই শেষ করে মন্ত্রণালয়ে তথ্য জমা রয়েছে। বাকি কিছু প্রতিষ্ঠান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এরই মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা আন্দোলনে নামেন। বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এ আন্দোলন চলছিল তাদের। জাতীয়করণের দাবিতে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গত ২১ জানুয়ারি থেকে দুই দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে গত ২৩ জানুয়ারি থেকে অনশনে নামেন এই শিক্ষকরা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৬ দিনের অনশন শেষে শিক্ষকরা বাড়ি ফিরে যান। টানা এ আন্দোলন কর্মসূচিতে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শিক্ষক নেতারা বলছেন, শতভাগ প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে জাতীয়করণ বঞ্চিত এসব বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের আওতায় আনতে হবে। সরকারের সব নিয়ম-নীতি অনুসরণ করা বিদ্যালয়গুলো অবিলম্বে জাতীয়করণ করার দাবি জানান নেতারা। বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির মহাসচিব মো. কামাল হোসেন গতকাল বলেন, জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে আন্দোলন চলাকালে আমরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, গণশিক্ষা সচিব মো. আলমগীরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও আমাদের দাবির বিষয়ে একমত পোষণ করে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আগামী দুই মাসের মধ্যে এসব প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের কার্যক্রম শুরু হবে এমন আশ্বাস পেয়ে আমরণ অনশন স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। কামাল হোসেন আরও বলেন, দুই মাস পার হওয়ার পরও দাবি আদায়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হলে পুনরায় আন্দোলনে নামব আমরা।

সর্বশেষ খবর