মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
দৃষ্টান্ত

কুড়িগ্রামের ফাতেমা মাইক্রোসফটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামের ফাতেমা মাইক্রোসফটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর

দরিদ্র পরিবারের মেয়ে ফাতেমা মাইক্রোসফটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে সবাইকে শুধু চমকেই দেননি, তিনি আলোচনায় ওঠে এসেছেন নিজের জীবনের কাহিনী শুনিয়েও। কুড়িগ্রামের দিনমজুর বাবার সংসারে ৪ বোনসহ ৬ জনের টানাটানির সংসারে চতুর্থ শ্রেণিতেই পড়াশোনার পাট চুকে যায় ফাতেমার। অন্যের বাড়িতে ঠাঁই হয় গৃহকর্মী হিসেবে। ফাতেমা বলেন, ‘নয় বছর বয়সে আমি অন্যের বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসেবে বাবা-মা-বোনদের ছেড়ে চলে যাই। এরপর দুই বছর সেখানে কাজ করি। এ সময় বাবা আমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে এলে আশান্বিত হই আবার স্কুলে যেতে পারব বলে। কারণ পড়তে আমার খুব ভালো লাগত। কিন্তু বাসায় এসে শুনি আমাকে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। বিয়ের তোড়জোড় চলছিল। এ সময় কয়েকজন যুবক এসে বিয়ে বন্ধ করে দিল। তাদের এক কথা, সরকার বাল্যবিয়ে বন্ধে আইন করেছে। আমার বিয়ে দেওয়া চলবে না। ওরা ছিল স্থানীয় বেসরকারি সংগঠনের কর্মী। আমার বাবা-মা বিয়ে বন্ধ করে দিলেন। তারা বাবা-মাকে বুঝিয়ে আশার আলো পাঠশালাতে আমাকে ভর্তি করানো হলো। এরপর আমার জীবনটা বদলাতে শুরু করে।’ ফাতেমার ভাষ্য, ‘আমি সেখান থেকে প্রাথমিক, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে পাস করে কলেজে ভর্তি হই। কলেজে পড়ার পাশাপাশি আমি পাঠশালাতে মাইক্রোসফটের দেওয়া ল্যাবে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। এ সময় এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্টসহ  বেসিক কম্পিউটারে দক্ষ হয়ে উঠি। এর মধ্যে ২০১৬ সালে এখানে আসেন মাইক্রোসফটের নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সোনিয়া বশির কবির। তিনি আমার দক্ষতা দেখেন এবং জীবনের গল্প শোনেন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে মাইক্রোসফটের তত্ত্বাবধায়নে আমাকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেন। যেটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচার করেন তারা। এরপর আমাকে তাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর মনোনীত করা হয়। অ্যাম্বাসেডর নিযুক্তির বিষয়টি তারা চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে আমাকে জানান। এ সংবাদে আমি অত্যন্ত খুশি। আমার বাবা-মা এবং পরিবারের সবাই খুশি।’ ফাতেমা কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার পূর্ব রামখানা গ্রামের আয়নাল হক এবং ফরিদা বেগমের দ্বিতীয় সন্তান। দরিদ্রতার মাঝে বেড়ে ওঠা ফাতেমা নিজের অদম্য ইচ্ছা শক্তি এবং আশার আলো পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বিশ্বজিৎ বর্মণের সহযোগিতায় এখন স্বপ্নকে হাতের মুঠোয় পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি রায়গঞ্জ ডিগ্রি কলেজে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত এবং আশার আলোর ওয়ার্ল্ড উইনার আর্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের কম্পিউটার প্রশিক্ষক। এখানে তিনি নিয়মিত শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বাল্যবিয়ের সমস্যায় থাকা মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। তার প্রত্যাশা, আইটি শিক্ষক হয়ে সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের সহযোগিতা করা এবং বাল্যবিয়ে রোধে কাজ করে যাওয়া।

সর্বশেষ খবর