মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

মহাস্থানগড়ে নতুন চমক

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

মহাস্থানগড়ে নতুন চমক

ইতিহাস-ঐতিহ্যের সন্ধানে বগুড়ার মহাস্থানগড় এলাকায় খনন করে এবার মিলেছে মন্দিরসাদৃশ্য অবকাঠামো। আরও মিলেছে খ্রিস্টপূর্ব সময়ের বিভিন্ন পোড়ামাটির ফলকসহ বেশকিছু সমৃদ্ধ প্রত্নসামগ্রী। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা মতে, খননে বের হয়ে আসা অবকাঠামোগুলোর সঙ্গে শুঙ্গ, গুপ্ত ও পাল আমলের সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে। উদ্ধার হওয়া অবকাঠামো নিয়ে চলছে গবেষণা। বগুড়ার মহাস্থানগড়ের কাস্টডিয়ানের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় আড়াই  হাজার বছরের প্রাচীন নগরী বগুড়ার মহাস্থানগড়। আড়াই হাজার বছর আগের ইতিহাস ও ঐহিত্য সমৃদ্ধ এ নগরী। মহাস্থানগড়ের ভিতরের একটি অংশের নাম বৈরাগীর ভিটা। এ স্থানটি একটি রাজবাড়ি ছিল বলে ধারণা করা হয়। সেই সময়ের রাজা কর্তৃক মুনি, ঋষি বা বৈরাগীর সেবা করা হতো বলে স্থানটির নাম বৈরাগীর ভিটা। মহাস্থানগড়ের দুর্গ নগরীর প্রাচীরের দক্ষিণে অবস্থিত বৈরাগীর ভিটায় ১৯২৮ সালের দিকে প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খননে পাল আমলের প্রাথমিক ও শেষ যুগের দুটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। এর পাশেই লাগানো স্থানের নাম ধরা হয় লইয়েরকুড়ি বা মহাস্থানভিটা হিসেবে। প্রত্নতত্ত্ব কিছু পাওয়ার আশা থেকে বগুড়ার মহাস্থানগড়ের লইয়েরকুড়ি ও বৈরাগীর ভিটায় আবারও খননকাজ শুরু হয়। এবারের খননকাজ করে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স যৌথভাবে। ২০১৭ সালের অক্টোর মাসে যৌথভাবে খননকাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২৮ নভেম্বর। এরপর বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিকরা ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে খনন শুরু করেন। এই খননকাজ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি। প্রায় দুই মাস খননের পর পাওয়া গেছে গুপ্ত, পাল ও মৌর্য আমলের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার অবকাঠামো ও বেশকিছু প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের নিজস্ব অর্থায়নে খননকাজ পরিচালনা করার পর উন্মোচিত অবকাঠামো নিয়ে গবেষণা চলছে। খননকাজে নিযুক্ত ৬ সদস্যের দলের ফিল্ড ডাইরেক্টর হিসেবে ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা। এ ছাড়াও দলনেতা হিসেবে ছিলেন মহাস্থান জাদুঘরের সহকারী পরিচালক মুজিবুর রহমান। দলে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন সহকারী কাস্টডিয়ান এস এম হাসনাত বিন ইসলাম, সিনিয়র ড্রাফটম্যান আফজাল হোসেন, ফটোগ্রাফার আবুল কালাম আজাদ ও সার্ভেয়ার লোকমান হোসেন।

মহাস্থান জাদুঘরের সহকারী পরিচালক মুজিবুর রহমান জানান, এবার খননকালে স্থাপত্যশৈলীর পাশাপাশি বেশকিছু প্রত্নবস্তুর সন্ধান মিলেছে। মন্দিরসাদৃশ্য যে অবকাঠামো পাওয়া গেছে তার দুটি কক্ষ উন্মুক্ত হওয়ার পর আরও একটি কক্ষের সন্ধান পাওয়া গেছে। কক্ষগুলো এবং অবকাঠামোগুলো এমনভাবে পাওয়া গেছে যাতে মনে হচ্ছে এই কক্ষগুলো সাধারণত মন্দির বা পূজার কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। যে ধরনের অবকাঠামো মিলেছে তার আকৃতি মিল রয়েছে শুঙ্গ যুগের সঙ্গে। আবার কিছুটা মিল রয়েছে পাল, মৌর্য ও গুপ্ত আমলের সঙ্গে। এ ছাড়া খননে পাওয়া গেছে শুঙ্গযুগীয় টালির (টাইলস) ভগ্নাংশ, উত্তরাঞ্চলীয় উজ্জ্বল চকচকে কালো মৃৎপাত্র, বিভিন্ন যুগের মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির বাটি, পোড়ামাটির গুটিকা, পোড়ামাটির ছিদ্রযুক্ত গুটিকা, পাথরের গুটিকা ও কাচের গুটিকা, পোড়ামাটির মুদ্রা, পোড়ামাটির মূর্তি ও তৈজসপত্রের ভগ্নাংশ। উদ্ধার হওয়া এসব প্রত্নবস্তু মহাস্থান জাদুঘরের গবেষণাগারে নিয়ে পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি নকশা তৈরি এবং ভগ্নাংশগুলো জোড়া দেওয়ার কাজ করা হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করে বলেন, এর আগে বৈরাগী ভিটা খনন করে গুপ্ত আমলের শেষ দিকে তৈরি করা প্রাচীন ইটের দেয়াল পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও কাচের গুটিকা, মাছ ধরার জালে ব্যবহারের জন্য তৈরি পোড়ামাটির বল, ফুলাঙ্কিত ও পিরামিড আকারের নকশা করা ইট উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে উদ্ধার হওয়া সবকিছুই যিশুখ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৩০০ বছর আগের। তিনি আরও জানান, মহাস্থান দুর্গনগরীর মাঝামাঝি এলাকা লইয়েরকুড়ি নামে পরিচিত ভিটায় এই খননকাজ করা হয়। এই ভিটার উত্তর-পশ্চিম কোণে বৈরাগীর ভিটা, দক্ষিণ পাশে পরশুরাম প্যালেস ও জিয়তকুণ্ড, পূর্ব পাশে শিলাদেবীর ঘাট এবং উত্তর ও পশ্চিম পাশে উন্মুক্ত মাঠ রয়েছে।

মহাস্থান জাদুঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মুজিবুর রহমান জানান, এবারের খননকালে মন্দিরসাদৃশ্য অবকাঠামোর সন্ধান পাওয়া গেছে। ধারণা মতে এসব পাল, শুঙ্গ ও গুপ্ত শাসনামলের হতে পারে। সেগুলো নিয়ে গবেষণা চলছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর