মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

কেঁচো চাষে সফল কামরুননাহার

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

কেঁচো চাষে সফল কামরুননাহার

প্রথমে আগ্রহ তৈরি হয় একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলে কেঁচো চাষের খবর দেখার পর থেকে। কেঁচো চাষের পদ্ধতি যদি হাতেকলমে শিখতে পারতাম। এই আগ্রহ থেকেই কেঁচো চাষের পদ্ধতিটির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন আমি কেঁচো চাষ করছি— কথাগুলো বলছিলেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার  বিজয়পুর গ্রামের লাল মিয়ার স্ত্রী সফল কেঁচো চাষি গৃহবধূ কামরুননাহার। মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এলাকায় তিনি এখন একজন আদর্শ কৃষাণী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। ২০১৪ সালে বেসরকারি সংস্থা সিসিডিবি থেকে গ্রামে কেঁচো চাষের ওপর এক দিনের প্রশিক্ষণ হয়। সেখানে তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে ওই সংস্থা থেকে একটি করে ডাবর (মাটির বড় পাত্র), কিছু কেঁচো ও উপকরণ দেওয়া হয়।

কেঁচো সার তৈরি করতে কামরুননাহারকে বেশি বেগ পেতে হয় না। কারণ কেঁচো সার তৈরির প্রধান কাঁচামাল গোবর। দুটি গাভী রয়েছে তার। আছে দুটি গরুর বাচ্চাও। কেঁচো সার তৈরিতে প্রথমে গোবরকে বালু ও আবর্জনামুক্ত করেন। এরপর একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে মুখ বেঁধে ১০-১২ দিন ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দেন। এ সময়ের মধ্যে গোবর থেকে গ্যাস বেরিয়ে যায় এবং কালচে রং ধারণ করে। এরপর সেগুলো পলিথিনের বস্তার ওপর ঢেলে রিফাইন করে বা পানি দিয়ে হালকা নরম করে ডাবরে রাখা হয়। সেখানে কেঁচো ছেড়ে দিয়ে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখা হলে সার তৈরির কাজ শুরু হয়। কেঁচোর পরিমাণ বেশি হলে ১২-১৫ দিন, আর পরিমাণ কম হলে ১৮-২০ দিনের মতো সময় লাগে। বর্তমানে দুটি বড় এবং তিনটি মাঝারি আকারের ডাবরে কেঁচো সার তৈরি করছেন। বর্তমানে তাকে আর কেঁচো কিনতে হয় না। গোবরের মধ্যে কেঁচো ডিম দেয় এবং সেখান থেকেই কেঁচোর বাচ্চা জন্মে। আর এ সারগুলো তিনি নিজের কাজেই ব্যবহার করেন। যেমন— বেগুন, লাউ, আদা, হলুদ, শিম, মরিচ চাষে এবং নারিকেল গাছের গোড়ায় ব্যবহার করেন। তবে এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার টাকার কেঁচো বিক্রি করেছেন। আরও প্রায় চার হাজার টাকার মতো বিক্রি হবে। এ ছাড়া কেঁচো সার ১০ টাকা কেজি হিসেবে প্রতিবেশীদের কাছে বিক্রি করেছেন যেটা খুবই সামান্য। তার এ পদ্ধতি দেখে এখন অনেকেই কেঁচো সার তৈরিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ জন অনুপ্রাণিত হয়েছেন। কামরুননাহার বলেন, যখন কেঁচো চাষ শুরু করি তখন বাড়ির অনেকেই বাধা দিয়েছে। তেমন উৎসাহ পাইনি। তাতে আমি দমে যাইনি। নিজের চেষ্টায় এগিয়ে চলেছি। এখন আর বাধা নেই। আমার বাবা আনিছার রহমানও এখন কেঁচো চাষে আগ্রহী হয়েছেন। সার্বিক সহযোগিতা পেলে ভবিষতে কেঁচো চাষ আরও বড় পরিসরে করার ইচ্ছা আছে। সব কৃষক যখন কেঁচো সার নিজেরাই তৈরি করে তাদের জমিতে ব্যবহার করবেন, তখন রাসায়নিক সারের চাহিদাও কমতে শুরু হবে। আবাদের খরচও কমে আসবে। প্রতিবেশী গৃহবধূ জান্নাতুন নেছা বলেন, কেঁচো সার শিম গাছের গোড়ায় দিয়েছিলাম। কিছু দিন পর গাছের চেহারা সুন্দর হয়ে ওঠে। এখন গাছে শিম ধরতে শুরু করেছে। আগামীতে নিজেরাই কেঁচো সার তৈরি করব। জমিতে ফসলের ক্ষেত্রে এটি খুবই উপকারী। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক জানান, উপজেলায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অনেকেই কেঁচো চাষ শুরু করেছেন। বাণিজ্যিকভাবে এখনো চাষ শুরু হয়নি। তবে আগামীতে কেঁচো চাষ আরও বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।

সর্বশেষ খবর