শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাকা-সিলেট চার লেনের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে

প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা

নিজামুল হক বিপুল

ঢাকা-সিলেট চার লেনের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলতি বছর শুরু হওয়া নিয়ে শেষ পর্যন্ত অনিশ্চয়তাই দেখা দিয়েছে। যদিও ইতিমধ্যে এ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরবিহন ও মহাসড়ক বিভাগ, যাতে সরকারি অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৬১০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। সড়ক পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করা-সংক্রান্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে (সিএইচইসি) দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল সরকারের। কিন্তু কাজের প্রাক্কলন ব্যয় নিয়ে দরকষাকষিতে একমত না হওয়ায় সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ সিএইচইসিকে দেয়নি। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সরকার নিজস্ব অর্থায়নেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবেই গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে একাধিক বৈঠক করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা। এসব বৈঠকের পরই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ সরকারি অর্থায়নে করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১ জানুয়ারি সাংবাদিকদের সঙ্গে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে জানিয়েছিলেন, সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করবে। বেশি দর দেওয়ার কারণে সরকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে দিচ্ছে না। ওই সময় তিনি আরও জানিয়েছিলেন, সরকারি অর্থায়নে চলতি বছরই এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

সড়ক-মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি অর্থায়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে একটি প্রকল্প প্রস্তাব চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে যায়। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার পাশাপাশি সড়কের উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক সার্ভিস লেন থাকবে। প্রকল্পটি  বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, মহাসড়কে যেন সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারে। এটি বাস্তবায়ন হলে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক, বিমসটেক করিডর, সার্ক করিডরভুক্ত উপ-আঞ্চলিক মহাসড়ক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে আন্তদেশীয় ও দেশীয় শিল্প-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই মহাসড়ক হবে ২১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। প্রকল্পের আওতায় ৩২১টি আরসিসি কালভার্ট, ৭০টি ব্রিজ, ৫টি রেলওয়ে ওভারপাস, ৪টি ফ্লাইওভার ও ১০টি আন্ডারপাস এবং ৪২টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ১২ হাজার ৬১০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, যার পুরোটাই সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে সংস্থান করবে। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ১ জানুয়ারি, ২০১৮ থেকে ৩০ জুন, ২০২২ সাল পর্যন্ত। প্রকল্প সম্পর্কে ১৭টি মতামত দিয়েছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের পরিকল্পনা উইং। সেখানে এই প্রকল্পের সামগ্রিক বিষয় এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে আরও আলোচনা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সবে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। সেখান থেকে মতামত এলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন এই প্রস্তাবের ওপর দ্বিমত পোষণ করলে তা আবার সংশোধন করা হবে। অর্থাৎ পুরো প্রকল্পটিই এখন একেবারে প্রাথমিক ধাপে রয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্প প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের পর ইতিবাচক সাড়া দিলে প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করে অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে দরপত্র আহ্বান করা হবে। তারপর অনেক আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হতে কয়েক মাস লাগবে। সে ক্ষেত্রে সরকারের যে লক্ষ্য ছিল, আগামী নির্বাচনের আগে চলতি বছরই প্রকল্পের কাজ শুরু করার তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দীর্ঘ সময় লাগবে। অথচ গত বছরের প্রথম দিকেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। সরকার চেয়েছিল আগামী নির্বাচনের আগেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ দৃশ্যমান করতে।

সর্বশেষ খবর