শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

শিক্ষক সংকটে পর্যুদস্ত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়

শিক্ষার হালচাল ১৯

আকতারুজ্জামান

নোয়াখালীর হাতিয়া শহর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিতে ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২৫০ জন। একজন প্রধান শিক্ষক, একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ২৫ জন সহকারী শিক্ষকসহ মোট ২৭ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও মাত্র দুজন সহকারী শিক্ষক এখানে কর্মরত রয়েছেন। গত প্রায় দুই বছর ধরে স্কুলটিতে শিক্ষকের এমন সংকটাবস্থা চলছে। স্কুলটিতে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন আবুল ফারাহ মুহাম্মাদ শামছুদ্দিন। গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মাত্র দুজন নিয়মিত শিক্ষক নিয়ে  কোনোমতে বিদ্যালয়টি চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষক না থাকায় নামমাত্র পাঠদান সেবা দেওয়া হচ্ছে ছাত্রীদের। অভিভাবকরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এ স্কুল থেকে। আর অসহায় হয়ে পড়েছি আমরা। কারণ স্কুলের ফলাফলও কাঙ্ক্ষিত মানের হচ্ছে না। দ্রুত স্কুলটির শিক্ষক স্বল্পতা পূরণের জন্য সরকারের কাছে নিবেদন জানিয়েছেন তিনি। ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে রোকনউদ্দিন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১১টি শিক্ষকের পদ থাকলেও ছয়টি পদ শূন্য রয়েছে। শুধু  নোয়াখালীর হাতিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বা ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে রোকনউদ্দিন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ই নয়, দেশের অনেক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ২০১২ সাল থেকে সরকারি মাধ্যমিকে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্র মতে, সারা দেশে সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৩৪৩টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ রয়েছে মোট ১০ হাজার ৩৬১টি। কিন্তু স্কুলগুলোতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৮ হাজার ৮৭ জন শিক্ষক। বাকি ২ হাজার ২৭৪ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। তবে মাউশি সূত্র জানায়, অনেক স্কুলে শিক্ষকের স্বল্পতা থাকলেও রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে শিক্ষকের স্বল্পতা নেই বললেই চলে। মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, সরকারি মাধ্যমিক অনেক স্কুলে শিক্ষকের স্বল্পতা অস্বীকার করার মতো নয়। কিছু স্কুলে একেবারেই কম সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন। এই শিক্ষকরা স্কুল চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে মাঝে-মধ্যেই সারা দেশে স্কুলগুলোতে শিক্ষকদের শূন্য পদে সমন্বয় করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এ পদে নিয়োগ বন্ধ থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বিসিএস উত্তীর্ণ চাকরি প্রার্থীদের সরকারি মাধ্যমিকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে অধিকতর মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ পাচ্ছে। কয়েকটি বিসিএস থেকে শিক্ষক নিয়োগ করা গেলেই শিক্ষকদের শূন্য পদ পূরণ করা সম্ভব হবে। জানা গেছে, সরকারি মাধ্যমিকে শিক্ষক সংকট দূর করতে ৩৪তম বিসিএস নন-ক্যাডারে উত্তীর্ণ ৪৫০ চাকরি প্রার্থীকে সরকারি মাধ্যমিকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে প্রথম দফায় ২৮৯ জন নিয়োগ  পেয়েছেন। এ ছাড়া নন ক্যাডার থেকে আরও সাত শতাধিক চাকরি প্রার্থীকে সরকারি মাধ্যমিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর থেকে জানা গেছে, বিসিএসের নন ক্যাডার থেকে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পেতে অতি সম্প্রতি ১ হাজার ৫৫৬ জনের একটি চাহিদা সরকারি কর্মকমিশনে পাঠানো হয়েছে। সাধারণত চাহিদাপত্রের ৫০ শতাংশ পদে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। মাউশির পরিচালক আবদুল মান্নান জানান, আশা করব যাতে পিএসসি শতভাগ চাহিদামাফিক বরাদ্দ দেয়। তাহলে সরকারি মাধ্যমিকে শিক্ষক সংকট একেবারে কমে আসবে।

সর্বশেষ খবর