রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাপুয়ার বন্দীশিবিরে ওদের করুণ জীবন

প্রতিদিন ডেস্ক

পাপুয়া নিউগিনির একটি বন্দীশিবিরেই চার বছর ধরে আটকে রয়েছেন ১২ বাংলাদেশি। তারা কাজের সন্ধানে সহায়-সম্পদ বিক্রি করে দেশ ছেড়েছিলেন। তারপর দালালদের খপ্পরে থেকে কাজের বদলে পেয়েছেন বন্দীশিবির।

বিবিসি বাংলা এই বন্দীদের একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে। বন্দীদের মধ্যে একজন জহিরুল ইসলাম। তার বাড়ি বাংলাদেশের গাজীপুরে। উন্নত জীবনের আশায় ২০১৩ সালে তিনি সমুদ্রপথে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ার উদ্দেশে। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানো হয়নি তার। সেখান থেকে ইন্দোনেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া। সবশেষে পাপুয়া নিউগিনির বন্দীশিবিরে ঠাঁই হয় তার। সেখানে কেটে যায় জীবনের চারটি বছর। পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি। জহিরুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত তার ১০ লাখেরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে। দেশে জমি-জমা বিক্রি করে, ঋণ করে তিনি সেই টাকা জোগাড় করেন। তিনি যে বেঁচে আছেন দীর্ঘদিন তা জানাতে পারেননি তার পরিবারকে। তিনি বলেন, এ সময়ের মধ্যে আমার বাবা মারা যান। কিন্তু আমি সে খবর পেয়েছি অনেক পরে। কারণ আমার পরিবার জানত না যে আমি বেঁচে আছি। জহিরুল ইসলাম জানান, দালালের মাধ্যমে তিনি কাগজপত্র করেছিলেন বিদেশে যাওয়ার। দরিদ্র পরিবারের সন্তান তিনি। বিদেশে গিয়ে কাজ করে বাড়িতে টাকা পাঠাবেন— এমনটাই ছিল তার লক্ষ্য। পরিবারও আশায় বুক বেঁধে ছিল। কিন্তু ২৫ বছরের যে যুবক বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় কাজের সন্ধানে, তার খোঁজ মেলে চার বছর পর। তিনি জানান, পদে পদে তাকে অর্থ দিতে হয়েছে কখনো গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য, আবার কখনো কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য।

 কিন্তু চূড়ান্ত গন্তব্য কিংবা কাজ কোনোটাই হয়নি তার। অস্ট্রেলিয়া পৌঁছানোর পর তিনি দেখতে পান তারই মতো আরও অনেক বাংলাদেশি রয়েছেন সেখানে, যারা কাজের খোঁজে গিয়ে আটকা পড়েছেন। এরপর অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ এই বাংলাদেশিদের প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপ পাপুয়া নিউগিনির একটি অভিবাসী ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়। নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যেসব আশ্রয়প্রার্থী অস্ট্রেলিয়ায় ঢোকার চেষ্টা করে, তাদের পাপুয়া নিউগিনিতে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি রয়েছে। এই অভিবাসী শিবিরে জহিরুল ইসলামের মতো আটক অভিবাসীদের বলা হয়, বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের অন্য কোনো দেশে পাঠানো হবে। কিন্তু চার বছর পেরিয়ে গেলেও একরকম নজরবন্দির মধ্যে জীবন পার করতে হচ্ছে তাকেসহ আরও অনেক বাংলাদেশিকে। আটক থাকার কারণে কোনো কাজের সুযোগ ছিল না। হাতে তাই টাকা-পয়সাও নেই। শুধু তাদের ক্যাম্পেই এ মুহূর্তে রয়েছেন ১২ জন বাংলাদেশি। অন্যান্য ক্যাম্পে আরও বাংলাদেশি আছেন বলে তিনি জানান। অতি সম্প্রতি দুজনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জহিরুল উল্লেখ করেন। তাদেরও ফেরত পাঠানো হবে বলে তারা জানতে পেরেছেন। কারাগারে আটক বাংলাদেশিদের অনেকেই বলেছেন, তাদের যদি অন্য কোনো দেশে পাঠিয়ে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে কিছু অর্থ তারা পরিবারের কাছে পাঠাতে পারবেন। এতে অন্তত ঋণের টাকাগুলো তারা শোধ করতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর