শিরোনাম
বুধবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রস্তুতি ডাকসু নির্বাচনের

আবারও অনশনে ওয়ালিদ

ফরহাদ উদ্দীন

দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বন্ধ থাকা ডাকসু নির্বাচন আগামী বছরের মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করতে উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই লক্ষ্যে চলছে ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ। এ ছাড়া সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে শিগগিরই বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আলোচনায়ও বসবে প্রশাসন। তবে প্রশাসনের এসব উদ্যোগ সত্ত্বেও আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আবারও অনশনে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের নাইট কোর্সের ছাত্র ওয়ালিদ আশরাফ। ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করতে গত বছরের ১০ অক্টোবর হাই কোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তনে তিনি অনশন শুরু করেন। এর আগে তিনি টানা ১৫ দিন অনশন করেছিলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের আশ্বাসে তিনি অনশন ভেঙেছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হলের বৈধ ছাত্র-ছাত্রীর তালিকা করা হচ্ছে। এ তালিকা অনুযায়ী ডাকসুর ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হবে। এ বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নোটিস প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া বহিষ্কার হওয়া বা নাইট কোর্সের শিক্ষার্থীদের বিষয়েও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। একটি পূর্ণাঙ্গ ও নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নের জন্য ‘ইন্টার-অ্যাকটিভ ডাটাবেজ’ তৈরির কাজও চলছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। এসব কাজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি অটোমেশনের মধ্যে নিয়ে এলে ডাকসু নির্বাচন করা সহজ হবে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাস্টারদা সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, সর্বশেষ যে ডাকসু নির্বাচন হয় তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল তিন বছর আগে। আর আমরা দীর্ঘ ২৭ বছর পর ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছি। দীর্ঘদিন এ নির্বাচন বন্ধ থাকায় যেসব জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা কয়েক মাসের মধ্যে দূর করা সম্ভব নয়। সঠিকভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করা না হলে এ উদ্যোগটি হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ দ্রুত শেষ করা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে আমরা এ কাজ শেষ করতে পারব। এরপর নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা ক্রিয়াশীল সব ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আলোচনায় বসব। আশা করি এ কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারব। এদিকে আবারও অনশনে বসার কারণ হিসেবে ওয়ালিদ আশরাফ বলেছেন, হাই কোর্ট বলেছে ছয় মাসের মধ্যে সিনেট পূর্ণাঙ্গ করতে হবে। আর ডাকসু নির্বাচনের মাধমে সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি না থাকলে সিনেট অপূর্ণাঙ্গই থাকবে। এই এপ্রিলের ১০ তারিখে সেই রায়ের ছয় মাস হবে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচনের কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন নিয়ে গত বছরের ১০ অক্টোবরের ওই আদেশের পর এ বছরের ১৭ জানুয়ারি ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণের কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। ওয়ালিদ আশরাফ বলেন, আমি ডাকসু নির্বাচনের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি না। এই দুর্বল প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন দিতে পারবে না। আর হাই কোর্টের নির্দেশকে ম্যানিপুলেশন করা হচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে বিরাট ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি তুহিনকান্তি দাশ বলেন, প্রথমে হাই কোর্ট ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করে সিনেট পূর্ণাঙ্গ করতে বলেছিল। কিন্তু তা না করে প্রশাসন আগামী বছরের মার্চে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা থেকে যায়। ছাত্রলীগ ঢাবি শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, প্রশাসন ইতিমধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিটি হলে ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। এর পরও ডাকসু নির্বাচনের জন্য অনশনে বসা অযৌক্তিক। আমরাও ডাকসু নির্বাচন চাই। কিন্তু প্রশাসনকে অসহযোগিতা করে নির্বাচন সম্ভব নয়।

সর্বশেষ খবর