শিরোনাম
বুধবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

নেত্রকোনার ২১ নদী বিলীন

নদীমাতৃক বাংলাদেশ। অথচ অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে সব নদী। নদী বাঁচাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ১৩তম পর্ব আজ প্রকাশিত হলো।

আলপনা বেগম, নেত্রকোনা

নেত্রকোনার ২১ নদী বিলীন

নদীতে প্যাঁচিয়ে থাকা শহরের নাম নেত্রকোনা। একটি মাত্র নদীর মধ্যে পুরো শহরটা প্যাঁচানো। নেত্রকোনাবাসীকে বাইরের লোকেরা মগড়া পাড়ের মানুষ হিসেবেই জানেন। আর সেই এক সময়ের খরসে াতা মগড়া এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। দখলে আর দূষণে শীর্ণকায় মগড়া শুধুই কাঁদে। কোথাও কোথাও তার বুক জুড়ে হয় ফসলের চাষ। কোথাও বা দূষণে ভরাট। কোথাও কোথাও তার বুকে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যক্তি স্থাপনা। নদীমাতৃক এই জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৫৭টি নদী ছিল। আর কালের আবর্তে এখন মাত্র ৭টি নদী চলমান রয়েছে। তার মধ্যে ২১টি নদী একেবারে বিলীন হয়ে গেছে। অন্যগুলো খাল বা নালা আকারে রয়েছে। রয়ে যাওয়া নদীগুলোর মধ্যে মগড়া, কংস, সোমেশ্বরী, ধনু, উব্দাখালি, সাইডুলি ও বিষনাই কিছুটা চলমান। আর এগুলোর মধ্যে সৌন্দর্যবর্ধনের দিক দিয়ে মগড়া নদীই শ্রেষ্ঠ ছিল। জানা গেছে, মগড়া নদীটি সেনেরচর হয়ে পূর্বদিক দিয়ে ময়মনসিংহের ফুলপুর হয়ে নেত্রকোনার পূর্বধলা ত্রিমোহনীতে এসে যোগ হয়। আর এই মগড়া নদী পুরো শহরকে সাপের মতো প্যাঁচিয়ে আটপাড়া, মদন ও খালিয়াজুরী উপজেলার সীমানা সুনামগঞ্জের ধনু নদীতে গিয়ে মিশেছে। জেলার পূর্বধলা ধলাই নদীর মোহনা থেকে ধনু নদী পর্যন্ত ১৪৬ কি.মি দীর্ঘ মগড়া নদীতে গত প্রায় এক যুগ আগেও লঞ্চ ট্রলার চলত। কিন্তু বর্তমানে নেত্রকোনা পৌর শহরের মধ্যেই ১৫৬টি পয়েন্টে বিভিন্ন স্থাপনা এবং দখলে বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে নৌচলাচল। অপরিকল্পিত ব্রিজগুলোও নৌ চলাচলের প্রধান অন্তরায়। তার ওপর পৌর শহরের ডাস্টবিন হিসেবেও আজকাল ব্যবহূত হচ্ছে নদীটি। ভরাট আর দূষণে এখন মগড়া অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে দিন দিন। এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই নদীটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখন বর্ষাকালের প্রথমেই নদী উপচে জল উঠে যায় শহরের অলিগলিতে। আবার শুকনো মৌসুমে নদীর বুকে ফসলের চাষাবাদ হয়। জেলাবাসীর মানববন্ধনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের পর দখলদারদের উচ্ছেদ করতে স্থানীয় প্রশাসন থেকে অভিযান প্রস্তুতি দেখা গেলেও তা আর কার্যকর হয় না। অন্যদিকে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা নদী দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদীতে রূপান্তর হয়। এটিও অপরিকল্পিত এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে মরে যাচ্ছে। পাহাড়ি একটি ঢল আসলেই নদীটি উপচে দুর্গাপুরসহ পুরো জেলা ডুবে যায়। শুকনো মৌসুমে আবার পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায়। এদিকে একেবারে জেলা থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে নামকরা তুষাই, বেতাই, ধলাই পাঠখোড়া, ঘোড়াউত্রা, নেতাই, গুমতি, গোলামাখালি, রাজ রাজেশ্বরী, বৌলাই, মাদল, কানিগাং, বয়রাহালা, খরচা, চেন্নাই , হালোলিয়া, বন্নী,  বালচসহ মোট ২১টি নদী। এ ছাড়া নিতাই, ভোগাই, চেনাখালি, পিয়াইন, মহাদেও, সাপমরা, মরা সুরমা, নাগডড়া, কালিহর, লাউয়ারীসহ বাকিগুলো মরা নদীতে রূপান্তর হয়েছে। কোনোটি ড্রেন এবং কোনোটি খালে পরিণত। এসব প্রতিটি নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল এখানকার ব্যবসা- বাণিজ্য। কালের পরিক্রমায় কালিগঞ্জ থেকে নেত্রকোনা নামে পরিচিতি লাভ করেছিল শহরটি। তাই নদীগুলোকে বাঁচিয়ে শহর রক্ষা এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মগড়া নদী রক্ষায় সভা সেমিনারও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর