দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ও তার স্ত্রীসহ ১৭ জনের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে জানান দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য। ওই ১৭ জন যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারেন সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের বিশেষ শাখাকে অবহিত করা হয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক সামছুল আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়। দুদক জানায়, ২০১৩ সালের ৩ জুন চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে ফারমার্স ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ব্যাংকটির শাখার সংখ্যা ৫৬ এবং এটিএম বুথ রয়েছে ১১টি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটি মোট ঋণ বিতরণ করেছে ৪ হাজার ৪১৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে গত বছর এই ব্যাংক থেকে দেওয়া ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৮৩৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফারমার্স ব্যাংকের মোট আমানত সংগ্রহের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যা ২০১৫ সালে ছিল ৩ হাজার ৪৮২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সম্প্রতি ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক চিশতী। ১৯ ডিসেম্বর ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীমকেও অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংসদ সদস্য বিএইচ হারুনকে দুদকে তলব : জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ১৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক বজলুল হক হারুনকে (বিএইচ হারুন) তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের উপপরিচালক শামসুল হকের সই করা চিঠি গতকাল তার আবাসিক ও অফিসের ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বিএইচ হারুনকে আগামী ১১ এপ্রিল দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে। বিএইচ হারুন ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। জানা গেছে, বিএইচ হারুনের বিরুদ্ধে ১৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন প্রিমিয়ার ব্যাংকের গ্রাহক মেসার্স রুমী এন্টারপ্রাইজের মালিক ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান। দুদকে লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, তার ব্যাংক হিসাব থেকে ব্যাংকটির পরিচালক এমপি বিএইচ হারুন অন্য কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ওই অর্থ সরিয়ে নিয়েছেন। এসব অর্থ দিয়ে সংসদ সদস্য হারুন ব্যাংকের দেনা পরিশোধ, প্রিমিয়ার ব্যাংকসহ বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ক্রয়, বনানী ও বারিধারায় বহুতল ভবন নির্মাণ, তার বড় ছেলেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক করা, দুটি জাহাজ ক্রয়, বারিধারা আবাসিক এলাকায় একটি প্লট ক্রয় ও চারটি বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয়সহ নানা খাতে ব্যয় করেছেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। শামসুল আলমের নেতৃত্বে দুই সদস্যের অনুসন্ধান দলের অপর সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। অভিযোগে বলা হয়, সৌদি সরকারের সাহায্যে ২০০৮ সালে সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ১৫ হাজার ঘর নির্মাণে ২০৪ কোটি টাকার কাজ পান তিনি। তার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ছিল প্রিমিয়ার ব্যাংকের বংশাল শাখায়। সিডর এলাকায় কাজ চলাকালে ব্যাংকে জমা হওয়া ২০৪ কোটি টাকার মধ্যে ২৯৭টি চেকের মাধ্যমে ৭০ কোটি টাকা উত্তোলন করেন তিনি। কাজ শেষে বাকি ১৩৪ কোটি টাকা তোলার জন্য বংশাল শাখায় গেলে তৎকালীন শাখা ম্যানেজার সামসুদ্দিন চৌধুরী তাকে জানান, তিনি (গ্রাহক খলিলুর রহমান) সব টাকা তুলে নিয়ে গেছেন এবং হিসাবও বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর তিনি দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করেন। অর্থ আত্মসাতের সময় বিএইচ হারুন প্রিমিয়ার ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।