শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

কুমিল্লায় উন্নয়ন প্যাকেজ প্রধানমন্ত্রীর

কোম্পানীগঞ্জ-মুরাদনগর-হোমনা মহাসড়ক ও গৌরীপুর-হোমনা সেতু, কুমিল্লা শহরের শাসনগাছা রেলওয়ে ওভারপাস এবং কুমিল্লার পদুয়ার বাজার রেলওয়ে ওভারপাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

কুমিল্লায় উন্নয়ন প্যাকেজ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন—বাংলাদেশ প্রতিদিন

কুমিল্লাবাসীর জন্য চারটি প্যাকেজ প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুমিল্লায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের এই চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি।

প্রকল্পগুলো হচ্ছে— কোম্পানীগঞ্জ-মুরাদনগর-হোমনা মহাসড়ক ও গৌরীপুর-হোমনা সেতু, কুমিল্লা শহরের শাসনগাছা রেলওয়ে ওভারপাস এবং কুমিল্লার পদুয়ার বাজার রেলওয়ে ওভারপাস। একই সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে ফোর-লেন প্রকল্পের শেষ অংশ হিসেবে ৩০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চার-লেনবিশিষ্ট কুমিল্লার পদুয়ার বাজার রেলওয়ে ওভারপাস উদ্বোধন করা হয়। ৩৪৪ দশমিক ১৭৫ মিটার দীর্ঘ এবং ২১ দশমিক ৬০ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট প্রকল্পটি সড়ক, পরিবহন ও জনপদ অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড সম্পন্ন করেছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় সড়ক ও জনপদ অধিদফতর ৬৩১ দশমিক ৫০ মিটার দীর্ঘ এবং ৮ দশমিক ৯ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট কুমিল্লা শহরের শাসনগাছা রেলওয়ে ওভারপাসটি নির্মাণ করা হয়েছে, যার নির্মাণ ব্যয় ৯৪ কোটি ৬ লাখ টাকা। ২৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মুরাদনগর-হোমনা মহাসড়ক ও ১১২ দশমিক ৬ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থ গৌরীপুর-হোমনা সেতুটি ৭৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক ও জনপদ অধিদফতর নির্মাণ করেছে। অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন-চিফ মেজর জেনারেল সিদ্দিকুর রহমান সরকার উপস্থিত ছিলেন। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম প্রকল্পগুলো সম্পর্কে অনুষ্ঠানে ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করার জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। তাই দেশটাকে আমাদের সবাই মিলে গড়ে তুলতে হবে। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলব। উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব। পরে প্রধানমন্ত্রী ৯টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন।

আমাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগ দেন কুমিল্লার প্রশাসন, আওয়ামী লীগের এমপি ও নেতারা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তারা যোগ দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। কুমিল্লা থেকে ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর। প্রধানমন্ত্রীকে কুমিল্লাবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব চন্দন কুমার দে, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অরুন আলো চাকমা, কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন, সওজ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক মো. ওমর ফারুক ও নারী নেত্রী পাপড়ি বসু প্রমুখ।

রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না : গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব সলিল শেঠি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে চুক্তি সম্পাদিত হওয়া সত্ত্বেও তাদের ফেরত নিতে এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ব্রিফিং করেন। তিনি বলেন, বৈঠকে শেখ হাসিনা আরও বলেন, মিয়ানমারের কয়েকজন মন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন ও বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দুরবস্থা দেখে গেছেন। দ্রুত ও কার্যকরভাবে রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করতে ইতিমধ্যে তাদের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় অত্যন্ত সচেতন। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পুনর্বাসন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সেখানে অস্থায়ীভাবে তাদের আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করছে।

বৈঠকে সলিল শেঠি বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী পরিচালিত নির্যাতন একটি অপরাধ। আমি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করেছি, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের ওপর নির্যাতনের প্রমাণ উপগ্রহের ছবি ও ভিডিও থেকে পেয়েছি। রোহিঙ্গা নারীরা এখনো ভীত-সন্ত্রস্ত। মিয়ানমারকে অবশ্যই পূর্ণ নিরাপত্তা ও সুরক্ষিতভাবে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের পক্ষে এ ব্যাপারে আরও প্রচারণা ও চাপ থাকা উচিত। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার ব্যবস্থাপনায় খুবই চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর