শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত চারুকলা চত্বর

মোস্তফা মতিহার

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত চারুকলা চত্বর

দুয়ারে কড়া নাড়ছে বৈশাখ। তাই পুরনো জরাজীর্ণতাকে মুছে ফেলে মানবতা, ঐক্য ও অসাম্প্রদায়িকতার অনুষঙ্গ বিনির্মাণে মহাব্যস্ত সময় পার করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা চত্বর।

বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ বরণে ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ প্রতিপাদ্যে এবার একটি সুন্দর, সুখি ও হানাহানিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান জানাচ্ছেন চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি গ্রহণকারীরা। সে লক্ষ্যেই দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন অনুষদের বিএফএ’র ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। জয়নুল আর্ট গ্যালারির সামনের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে পুতুল, মাটির সরা ও পেপার ওয়ার্কস নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আরেক দিকে জয়নুল আর্ট গ্যালারির ভিতরে পেপার মাস্ক ও বিভিন্ন লোকজ মোটিভের কাজে ব্যস্ত একই অনুষদের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। বকুলতলার জয়নুল শিশু নিকেতনেও পাখি, মাছ, বিভিন্ন ধরনের মাস্ক নির্মাণে দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র দায়িত্বরতরা।

এবারের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র যুগ্ম-আহ্বায়ক প্রিন্টিং বিভাগের এমএফএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান মিশু বলেন, সারা দেশে যেভাবে হানাহানি ও মারামারি হচ্ছে এবং সাত বছরের শিশু থেকে সবশ্রেণি ও বয়সী নারীরা যেভাবে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, সে কারণে সারা দেশের সব মানুষকে মানবিক মানুষ হওয়ার আহ্বানই জানানো হচ্ছে এবারের থিম। মানুষকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার জন্য সোনার হরিণ হিসেবে এবারের মূল প্রতীক হিসেবে হরিণকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।

বড় একটি হরিণের অবয়বে সব মানুষকে সোনার মানুষ হওয়ার আহ্বান জানানো হবে। এবারের শোভাযাত্রাকে সফল করার লক্ষ্যে শিল্পী ও শিক্ষক শিশির ভট্টাচার্যকে আহ্বায়ক করে ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মাছ, পাখি, পেঁচা, ছোট সরা, বড় সরা, পেপার মাস্ক, মুখোশ, মাস্কট, টেপাপুতুল, বাঘ, মা ও শিশুসহ নানা ধরনের শিল্পকর্ম তৈরিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আন্তরিকতা না থাকলে এত বড় আয়োজনকে সফল করা সম্ভব হতো না।

চারুকলা অনুষদের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ লিমন বলেন, একদিকে শিল্পকর্মের নির্মাণ ও অন্যদিকে সেসব বিক্রি করে শোভাযাত্রার তহবিল গঠন করতে হচ্ছে। ঐতিহ্য ও শেকড়ের টানের এমন আয়োজনকে সফল করার জন্য অনেক বেশি অর্থের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও চারুকলা অনুষদ বরাবরের মতো এবারও কোনো স্পন্সর কোম্পানির দ্বারস্থ হয়নি। অনেক কোম্পানিই আমাদের এ আয়োজনে স্পন্সর করতে চায় কিন্তু এতে করে আমাদের নিজস্বতা ক্ষুণ্ন হবে বলে আমরা মনে করি। আমরা চাই না বাংলার লোকজ ঐতিহ্যের এই সংস্কৃতিতে কর্পোরেট কালচারের অনুপ্রবেশ ঘটুক। যার কারণে আমরা নিজেরাই মঙ্গল শোভাযাত্রার অনুষঙ্গ তৈরি করছি, আর বিক্রি করে তহবিল গঠন করছি।

‘সুলভ মূল্যে শিল্পকে সব মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়াই চারুকলার লক্ষ্য’ বলে জানান জয়নুল শিশু নিকেতনে কাগজের পাখি, মাছসহ নানা লোকজ মোটিভ তৈরির তদারকির দায়িত্বেরত সঞ্চিতা বিশ্বাস। তিনি বলেন, পাখির মাধ্যমে জনসাধারণের মাঝে শান্তি, ঐক্য ও সৌহার্দ ছড়িয়ে দিতে আমরা কাজ করছি। নিজেদের পরিশ্রমের পাশাপাশি শিক্ষকদের সহযোগিতা ও আন্তরিকতা এই আয়োজনের সফলতার অংশীদার হয়ে থাকবে।

‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র তহবিল গঠনে বিক্রি করার জন্য শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে ওয়াটার কালার পেপার ওয়ার্কসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা, শিক্ষকদের পেপার ওয়ার্কসের দাম ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। বড় সরার দাম ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা, ছোট সরা ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। বাঘ ও পেঁচা ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা। পাখি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। পেপার ম্যাশ ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়া হাত পাখা, বিভিন্ন শো-পিসও বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। যার দাম ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সারা রাত কাজ করছেন শিল্পীরা। আর বিক্রি করছেন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। চৈত্র সংক্রান্তিতে শেষ হবে চারুকলা অনুষদের এবারের বৈশাখ বরণ প্রস্তুতির এ কর্মযজ্ঞ। পয়লা বৈশাখ সকাল সাড়ে ৯টায় এবারের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’টি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বের হয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল হয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে এসে শেষ হবে।

সর্বশেষ খবর