শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

মৌপায়ী পাখি ‘চুনিমুখো মৌটুসি

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

মৌপায়ী পাখি ‘চুনিমুখো মৌটুসি

চুনিমুখো মৌটুসি। শুধু নামেই নয়, দেখতে খুব সুন্দর। এদের প্রধান খাবার ফুলের মধু। আর এ জন্য তাদের নামের আগে যুক্ত হয়েছে মৌপায়ী পাখি। ফুলের মধু ছাড়াও এরা পোকামাকড়, গাছের পাতা, ফুল ও মুকুলে খাদ্যের খুঁজে উড়ে বেড়ায়। এদের ইংরেজি নাম Ruby-cheeked Sunbird (বৈজ্ঞানিক নাম Anthreptes singalensis). চুনিমুখো মৌটুসি সবুজাভ মৌটুসি (নেকটার্নিডাই) পরিবারভুক্ত এক প্রজাতির মৌপায়ী পাখি। পাখি বিশারদরা জানান, পৃথিবীর প্রায় ২৮ লাখ ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়েই এদের আবাস। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, ভুটান, কম্বোডিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, ব্রুনাই, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে এদের নিয়মিত দেখা যায়। এসব দেশে এরা স্থায়ী পাখি।

সম্প্রতি শ্রীমঙ্গলের শৌখিন ফটোগ্রাফার খোকন  থৌনাউজম সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে এই পাখিটি ক্যামেরাবন্দী করেন। চুনিমুখো মৌটুসি অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকার। এরা চকচকে সবুজ বর্ণের পাখি। দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ সেন্টিমিটার, ডানা ৫.৩ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ১.৫ সেন্টিমিটার, লেজ ৪.২ সেন্টিমিটার ও পা ১.৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারার মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। পুরুষ মৌটুসির মাথার চাঁদি, ঘাড়, পিঠ, কোমর ও লেজের ওপরের আচ্ছাদক ধাতব সবুজ। ডানা ও লেজ কালচে। তবে রোদে এর গাল উজ্জ্বল লাল থেকে কিছুটা বেগুনি দেখায়। গলা ও বুক লালচে-কমলা, পেট হলুদ। স্ত্রী মৌটুসির পিঠ অনুজ্জ্বল জলপাই সবুজ। গলা ও বুক হালকা লালচে-কমলা। গালে লাল রং থাকে না। পেট পুরুষ মৌটুসির মতোই হলুদ। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি উভয়ের চোখ লাল। ঠোঁট অপেক্ষাকৃত খাটো ও সোজা। ঠোঁটের রং কালচে। পা ও পায়ের পাতা সবুজ-ধূসর। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির চেহারা অবিকল স্ত্রী মৌটুসির মতো, কেবল দেহতলে হলুদ রং থাকে না। চুনিমুখো মৌটুসি পাতলা বন, বনের আশপাশে চাষাবাদের জন্য পরিষ্কার জায়গা, চিরসবুজ বন, ঝোপঝাড়ে বিচরণ করে। এরা সচরাচর একা বা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। তবে শীতকালে ছোট পতঙ্গভুক পাখির দলে যোগ দেয়। ঝোপঝাড়ে ও গাছে গাছে এরা খাবারের খোঁজে ঘুরে বেড়ায়। মার্চ থেকে জুন মাস এদের প্রজনন মৌসুম। এ সময় ঝোপে ফার্ন ও আঁশ দিয়ে ছোট থলের মতো ঝুলন্ত বাসা বাঁধে। ডিম দেয় ২টি। ডিমের রং সাদা, ডিমে বাদামি-ধূসর দাগ থাকে। সৌল (সেভ আওয়ার আনপ্রোটেক্টেড লাইফ)-এর নির্বাহী পরিচালক তানিয়া খান বলেন, বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে। তেমন একটা না বাড়লেও আশঙ্কাজনক হারে কমেনি। সে কারণে আইইউসিএন এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। আমাদের দেশে ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

সর্বশেষ খবর