সোমবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
পুরান ঢাকার ঐতিহ্য-৩২

দৈন্যদশায় নবাব সিরাজউদ্দৌলা পার্ক

মাহবুব মমতাজী

দৈন্যদশায় নবাব সিরাজউদ্দৌলা পার্ক

পরিবারের সবাইকে নিয়ে পার্কে বেড়াতে যাওয়া। গাছের ছায়ায় চাদর বিছিয়ে গল্পগুজব-হৈচৈ এসব পুরান ঢাকাবাসীর কাছে এখন কেবলই স্মৃতি। ব্যস্ততা, পার্কের সংখ্যা হ্রাস ও পার্কের পরিবেশ নষ্ট হওয়াই এর মূল কারণ। এর মধ্যে যেসব পার্ক টিকে রয়েছে তাতে নেই যাওয়ার মতো পরিবেশ। পার্কগুলো আর তাদের আগের মতো আকর্ষণ করে না। টানে না নগরবাসীকে। তেমনি অবস্থা পুরান ঢাকার নয়াবাজারের জিন্দাবাহার সংলগ্ন নবাব সিরাজউদ্দৌলা পার্কের। পুরান ঢাকার কোলাহলের মাঝখানে এটি ছিল এক টুকরো অরণ্য। সবুজে মোড়া পার্কটি আগে পরিবেশবাদীদের মুগ্ধ করেছে। ছোট-বড় অনেক গাছ পার্কটিকে করেছে মনোরম। পার্কটির উত্তর দিকে প্রবেশপথ এবং নয়াবাজার রোড। পশ্চিমে বিখ্যাত জিন্দাবাহার জামে মসজিদ। পার্কটির পরিধি যেন দিন দিন কমছে। মৃতপ্রায় দশা এটির। অযত্নে অবহেলার ছাপ রয়েছে পার্কটিকে ঘিরে। যদিও পার্কটিতে এখন টিনের বেড়া দিয়ে সংস্কার কাজ চলছে। এ ছাড়া পার্কের চারপাশে ঘিরে রয়েছে অবৈধ বাসস্ট্যান্ড ও ফলের দোকান। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এখানকার পথচারী ও পার্কে আসা দর্শনার্থীদের। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী পার্কটি এখন দৈন্যদশায়। পার্কের প্রধান ফটকের সামনে রয়েছে গাংচিল পরিবহন নামক বাসস্ট্যান্ড ও পার্কের চারপাশ ঘিরে রয়েছে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হরেক রকমের দোকান। গুলিস্তান থেকে তাঁতীবাজার হয়ে বাবুবাজার ব্রিজ যেতেই হাতের ডানে কিছু গাছ চোখে পড়ে। এটিই সিরাজউদ্দৌলা পার্ক। কেউ কেউ একে জিন্দাবাহার পার্কও বলে। ১৯৩৪ সালে পার্কটি স্থাপিত হয়। আয়তন এক একরের একটু বেশি। পার্কটির পূর্ব কোণে একটি টংঘর বানানো। দক্ষিণ পাশে স্তূপ করে রাখা অনেক লোহার পাত। আশপাশে পার্কের গাজুড়ে অবস্থান নিয়েছে ট্রাকগুলো। ভিতরে পার্কের কোনো উপকরণ নেই। সেখানে প্রবেশের কোনো উপায় নেই শিশু-কিশোরদের। চারদিকে হাঁটার পথটি পাকা হলেও মাঠের পুরো অংশেই রয়েছে কাঁচা মাটি। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই এর মাটি কাদা হয়ে যায়। পাকা রাস্তাটি ধরেও একসঙ্গে বেশি লোক হাঁটা অসম্ভব। কেউ যদি ১১ বার পার্কটি প্রদক্ষিণ করে তবে সে ১ মাইল পূর্ণ করবে। সেই হিসাবেই রাস্তাটি করা। পার্কটির মাঝখানে একটি আকর্ষণীয় ফোয়ারা। কংক্রিটের ফোয়ারাটির মাথায় শান্তি ও নীরবতার প্রতীক একটি হোলিস্টার শোভা পায়। তবে ফোয়ারাটি অকার্যকর। আবার বসার স্থায়ী বেঞ্চও লোকসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। সোলায়মান নামে একজন জানান, তার বাসা নারিন্দা। তিনি প্রতিনিয়ত সকালে পার্কে আসতেন। বর্তমান পার্কের অবস্থা খুব খারাপ। সম্প্রতি সংস্কার কাজের জন্য পার্কটি বন্ধ রাখা হয়েছে। সুমন নামে আরেক যুবক জানায়, পার্কে ব্যায়ামের তেমন কোনো সরঞ্জাম নেই। আর যা আছে তা দিয়ে কোনো কাজ হয় না। এখানে কোনো রকম সুযোগ সুবিধা নেই। পানি খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। এমনকি শৌচাগারেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। বাইরে অবৈধ দোকান পাট ও গেটের সামনে বাস স্ট্যান্ডের পাশাপাশি ফলের দোকান থাকায় এখানে যাতায়াত করা কষ্টকর হয়ে যায় বাসিন্দাদের। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিল্লাহ শাহ বলেন, পার্কটির সংস্কার কাজ চলছে। ৫-৬ মাসের মধ্যে তা বিনোদনের উপযোগী করা হবে। এতে কোনো ঘেরা রাখা হবে না, যাতে মাদকসেবীরা আখড়া বানাতে না পারে।

সর্বশেষ খবর