শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

বর্ষার আগেই ভোগান্তির বার্তা

♦ কাজে আসছে না পানি নিষ্কাশন প্রকল্প
♦ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ পুরো মৌসুমেই চলবে
♦ খাল ও জলাধার ভরাটকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বর্ষার আগেই ভোগান্তির বার্তা

কয়েক মিনিটের বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক। শনিরআখড়া থেকে তোলা ছবি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বর্ষা মৌসুমে রাজধানীবাসীর দুর্ভোগের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায় জলজট। এ সমস্যা নিরসনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কারকাজ শুরু করলেও খাল উদ্ধারে অগ্রগতি না থাকায় কাজে আসছে না প্রকল্পগুলো। এদিকে এ বছর আগেই বর্ষা শুরু হয়ে যাওয়ায় জলজটের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন নগরবাসী।

সমস্যা এ বছর আরও জটিল হতে পারে উল্লেখ করে নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত বছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের উপস্থিতিতে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয় সভায় পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। প্রথম সিদ্ধান্ত ছিল, একটি সমন্বিত পরিকল্পনার আওতায় রাজধানীর উন্নয়ন কাজ করা। এই পুরো কাজের সমন্বয় দায়িত্ব জনপ্রতিনিধিদের হাতে থাকবে। অর্থাৎ সে অনুযায়ী সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সঙ্গতিপূর্ণভাবে সমন্বয় করতে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের আওতায় থাকা অ্যাডহক কাজ সম্পন্ন করতে হবে এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে শতভাগ সচল করতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে গণসম্পৃক্ততা তৈরি করতে হবে। কিন্তু এর কোনোটাই হয়নি। তিনি বলেন, এ বছর বর্ষা আরও এগিয়ে আসবে এবং অধিক পরিমাণে হবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এদিকে ঢাকা শহরে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প চলমান অবস্থায় রয়েছে। তাই রাজধানীবাসী ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়বে এটা এখন থেকেই স্পষ্ট। আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর এপ্রিলে ঢাকায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৫৭ দশমিক ৫ মিলিমিটার এবং সারা দেশে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩৬ দশমিক ৭ মিলিমিটার, যা গত বছরের তুলনায় বেশি। একদিকে আগাম বৃষ্টি, অন্যদিকে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় তৈরি হয়েছে ভোগান্তির শঙ্কা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উন্নয়ন কাজ বিষয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জানান, রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণে বিশেষ কার্যক্রম হিসেবে ৯ দশমিক ২৭২ কিলোমিটার রাস্তা, ১১ দশমিক ৭২ কিলোমিটার ড্রেন ও ১১ দশমিক ৪০২ কিলোমিটার ফুটপাথ উন্নয়নে কাজ করা হয়েছে। এতে ওই এলাকায় এখন জলাবদ্ধতা নিরসন হয়েছে। তিনি বলেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। কারণ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব কোনো খাল বা বড় কোনো ড্রেন নেই। যেগুলো রয়েছে সেগুলোর মালিকানা ওয়াসার। পানি অপসারণের দায়িত্বও ওয়াসার। আসাদুজ্জামান জানান, রাজধানীর ১১ বর্গকিলোমিটার এলাকার পানি অপসারণের জন্য টিটিপাড়ায় ওয়াসার তিনটি মেশিন রয়েছে। এই তিনটি মেশিন প্রতি ঘণ্টায় ৫৪ হাজার কিউবিক পানি অপসারণ করতে পারে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। দ্রুত বৃষ্টির পানি অপসারণ করতে হলে ওয়াসাকে তাদের পাম্পিং সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলে তিনি জানান। ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার সড়ক, সাড়ে ৯০০ কিলোমিটার ড্রেন ও প্রায় ২১৭ কিলোমিটার ফুটপাথ রয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের দীর্ঘমেয়াদি বর্ষায় রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সিটি করপোরেশনের জরিপ অনুযায়ী, ওই বর্ষায় ২২২ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার সড়ক, ২২৯ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার ড্রেন ও ৮০ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার ফুটপাথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল সার্কেল) শরীফ উদ্দীন বলেন, ‘খিলক্ষেত এলাকায় বর্ষা শুধু নয়, শুষ্ক মৌসুমেও সৃষ্টি হতো জলজট। এ সমস্যা নিরসনে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে খিলক্ষেত প্রধান সড়কের পাশে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন কিলোমিটার নর্দমা তৈরি করা হয়েছে। এই নর্দমার সাহায্যে বৃষ্টির পানি সরাসরি পূর্ব দিকের খালে চলে যাবে। এ ছাড়া মিরপুরের বেশ কিছু এলাকা, উত্তরা, প্রগতি সরণি, গুলশান, বনানী এলাকায় নদর্মার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। নর্দ্দা থেকে মালিবাগ আবুল হোটেল পর্যন্ত চার কিলোমিটার গভীর নর্দমা তৈরি করা হয়েছে। কারওয়ানবাজারে জলজট নিরসনে ইতিমধ্যে কাজ শেষ হয়েছে। এদিকে হাতির ঝিল অংশ থেকে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা তো পাচ্ছিই আমরা।’ তিনি বলেন, ‘আমরা অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে কাজ করছি। কিন্তু পানি যাবে কোথায়। খাল-বিল দখল-দূষণে বন্ধ থাকায় ড্রেন দিয়ে পানি নামতে পারছে না। এ জন্য ওয়াসা কাজ করছে। তাদের এ কাজে অগ্রগতি এবং পাম্পের পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা বাড়ানোর ওপর নির্ভর করছে জলজটের ভবিষ্যৎ।’ দুই সিটি করপোরেশন থেকে ঢাকা ওয়াসার খাল উদ্ধার কাজে জোর দেওয়ার বিষয়ে বললেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই এ সংস্থার। ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, রামচন্দ্রপুর খাল, রূপনগর খাল, বাউনিয়া খাল, ধোলাই খাল, সেগুনবাগিচা খাল ও মাণ্ডা খাল (মোট ৩০ কিলোমিটার) পুনঃখনন, ২৪৯ কিলোমিটার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের নালা পরিষ্কার, নালা মেরামত, সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্টের ময়লা অপসারণ, চারটি স্থায়ী পাম্পস্টেশন রক্ষণাবেক্ষণ ও ১৫টি অস্থায়ী পাম্পস্টেশন স্থাপনের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্ষা মৌসুম চলে এলেও কাজ কেবল প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে ২ এপ্রিল সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেছিলেন, জলজট নিরসনে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াসা। নগরবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, যার যখন ফান্ড আসে সে তখন রাস্তা খোঁড়ে। ফলে রাজধানীবাসীর সারা বছরই ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ বছর তো আরও আগাম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। খাল-বিল উদ্ধার না করলে কখনই জলজট দুর্ভোগ কমানো যাবে না।

সর্বশেষ খবর