শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

‘লাকি সিট’ জয়ের জন্য সব দলই তৎপর

মাসুদ হাসান বাদল, শেরপুর

‘লাকি সিট’ জয়ের জন্য সব দলই তৎপর

জাতীয় সংসদের শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনকে বলা হয় ‘লাকি সিট’। কারণ দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত এই আসনে যে দল জিতেছে সেই দলই সরকার গঠন করেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দল মাঠে এলে মূল লড়াইটা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই। তবুও এই পয়মন্ত আসনে বসার জন্য বড়-ছোট সব দলেরই তৎপরতা দেখা যায়। এ আসনে লড়ার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্তি ও নেতৃত্বের প্রশ্নে স্থানীয় এক নেতার সঙ্গে আরেক নেতার, এক কর্মীর সঙ্গে আরেক কর্মীর, এমনকি এক মহল্লা আরেক মহল্লার দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং চলছে। বিএনপিতে ও রকম অবস্থা না হলেও ওই দলে রয়েছে জামায়াতভীতি। জামায়াত কৌশলে তাদের প্রার্থী দিলে বিএনপির অনেক ভোট ওদিকে চলে যাবে— এ আশঙ্কা কাটছে না। নানা কারণে বিএনপি তেমন প্রকাশ্য না হলেও তলে তলে তারা ভোটের মাঠে সংগঠিত হচ্ছে। জামায়াত নড়াচড়া করতে না পারলেও ভোটের রাজনীতিতে এখানে ফ্যাক্টর।

লাকি সিটে পরপর দুই মেয়াদে আসীন রয়েছেন সরকারি দলের প্রকৌশলী এ কে ফজলুল হক। গেল নির্বাচনের পর তিনি নিষ্ক্রিয় থাকলেও ইদানীং জনসংযোগে মনোযোগী হয়েছেন। আওয়ামী লীগ তার বেশ কয়েকজন এমপিকে এবার মনোনয়ন দেবে না বলে গণমাধ্যমে যে খবর প্রচারিত হয়েছে তাতে ফজলুল হকের নামও পাওয়া যায়। এ খবর প্রকাশের পর তিনি নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেন। প্রথম মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার উন্নয়নে অমনোযোগিতার জন্য ব্যাপক সমালোচিত হন এই এমপি। ৫ জানুয়ারির ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রকৌশলী ফজলুল হক সেই দুর্নাম অনেকটাই ঘুচিয়েছেন। তিনি তার নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলাতেই চোখে পড়ার মতো অনেক উন্নয়ন করেছেন। সূত্র জানায়, তবু জেলা আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে তার বিরোধ চরমে। জেলা ও তার নির্বাচনী এলাকার মূল দল তার বিরুদ্ধে। তবে অঙ্গদলের নেতা-কর্মীদের বিরাট অংশ বর্তমান এমপির সঙ্গেই রয়েছে। দীর্ঘদিনের বিরোধ কাটিয়ে আরেক এমপি প্রার্থী ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আমিরুজ্জামান লেবু সম্প্রতি এমপি ফজলুল হকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তবে বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে দলের অভ্যন্তরে অভিযোগের যেন শেষ নেই। শ্রীবরর্দী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহারুল ইসলাম লিটন বর্তমান চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে এমপির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দলের বিরুদ্ধে অবস্থান ও উন্নয়ন প্রশ্নে মাঠে রয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে। এখানে তরুণদের পাশাপাশি মধ্যবয়সীও দু-এক জন মনোনয়ন-দৌড়ে ছুটছেন। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে সরকারি দলের প্রার্থীর তালিকা ততই দীর্ঘ হচ্ছে। এক বাড়িতেই দু-তিন জন করে প্রার্থিতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। শেরপুর-৩ লাকি সিটে সরকারি দলের সবাই এমপি হতে চাইছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের অন্যান্য মনোনয়নপ্রার্থী হলেন সজ্জন হিসেবে পরিচিত মুক্তিযোদ্ধা নূরল ইসলাম হিরু। ২৪ বছর ধরে মনোনয়ন চেয়ে চলেছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ইফতেখার হাসান কাফি জুবেরী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এ ডি এম শহিদুল ইসলাম, সাবেক এমপিপুত্র মহসিনুল বারী রুমি, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসরীন বেগম ফাতেমা, ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ এ এস এম ওয়ারেস নাঈম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মিজানুর রহমান রাজা, কৃষিবিদ ফররুখ আহাম্মেদ, ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান লেবু, প্রফেসর ডা. ওয়ালিউজ্জামান আশরাফি লতা ও হেদায়েতুল ইসলাম হেদা। খন্দকার মোহাম্মদ খুররম মারা যাওয়ায় তার স্ত্রী কাজী সাহেলি সুলতানা মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। সদ্য মাঠে নেমেছেন আরেক মনোনয়নপ্রার্থী কৃষিবিদ আল ফারুক ডিউন। ডিউন নতুন হলেও তিনি বঞ্চিত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে ভিন্ন রকমের প্রচারণা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এক ডজন মনোনয়নপ্রার্থীর মধ্যে কারও কারও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এলাকায় প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে, কোনো কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ইউপি মেম্বার হওয়ার পর্যায়েরও নয়। তবু তারা এমপি হওয়ার জন্য মরিয়া। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা অধ্যুষিত এই নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়নে ভুল হলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভরাডুবি হতে পারে। অন্যদিকে, এ আসনে বিএনপির নিশ্চিত প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি তিনবারের সাবেক এমপি মাহমুদুল হক রুবেল। রুবেল হচ্ছেন সরকারদলীয় এমপি ফজলুল হকের ভাতিজা। রুবেলের বাবা ফজলুল হকের ভাই ডা. সেরাজুল হক এ আসনে দীর্ঘদিন বিএনপির এমপি ছিলেন। এখানে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী। ভোটের রাজনীতিতে এখানে জামায়াতও বড় ফ্যাক্টর। গত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের দুই প্রার্থীর মধ্যে কলহ তীব্র হওয়ার সুযোগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হন। তখন থেকেই রুবেলের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। নির্বাচনের পর বিএনপির কোনো কর্মসূচিতেই জামায়াত অংশ নেয়নি। শোনা যাচ্ছে, জামায়াত নেতা নূরুজ্জামান বাদল ২০ দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এ আসনে অন্য কোনো দলের তেমন তৎপরতা নেই। তবে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন শিল্পপতি খালেদ হাসান কাজল ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খুরশেদ আলম ফর্সা।

সর্বশেষ খবর