বৃহস্পতিবার, ৭ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

পর্যবেক্ষক তালিকা থেকে বাদ পড়ল ফেমা-ব্রতী

গোলাম রাব্বানী

নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার তালিকা থেকে বাদ পড়ল সবচেয়ে পুরনো সংস্থা ফেমা ও ব্রতীর নাম। একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১১৯টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে এ বছরের জুন থেকে পরবর্তী ৫ বছরের জন্য নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল ইসির যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত ১১৯টি সংস্থার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। দুই-তিন দশক ধরে মাঠে থাকা দুই সংস্থার নাম বাদ দেওয়ার বিষয়ে ইসি বলছে, নির্ধারিত সময়ে নিবন্ধন আবেদন না করায় তালিকাভুক্ত হতে পারেনি ফেমা ও ব্রতী। সেই সঙ্গে ১৯৯টি আবেদন পর্যালোচনা করে নামসর্বস্ব ৮০টি সংস্থাকে বাদ দিয়েছে ইসি।

নিবন্ধন না পাওয়ায় ‘বিস্মিত’ ফেমা ও ব্রতীর প্রধান। তারা বলেছেন, আবেদন করার বিষয়টি নজরে না আসায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আশ্বাসে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। পুরনো এ দুটি সংস্থাকে বাদ রেখে কী করে পর্যবেক্ষক তালিকা চূড়ান্ত করে ইসি? এমন প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উল্লেখ সংখ্যক সংস্থা ভোট পর্যবেক্ষণে যায় না। যেসব সংস্থা পর্যবেক্ষণ করে তাদের মধ্যে কিছু সংস্থা নিয়মিত ইসিতে প্রতিবেদন জমা দেয় না। নিবন্ধনের আবেদন ৬ মাস ধরে পর্যালোচনা করলেও সেই সংস্থাগুলোই তালিকাভুক্ত রয়েছে। কিন্তু ভোটের কাজে থাকা অন্যতম সংস্থাই বাদ দিয়ে চূড়ান্ত তালিকা করা হলো। ভোটের পরে পর্যবেক্ষণ নিয়মিত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও ৩০-৫০টি সংস্থাই তা পালন করে। আর কমিশন তাদের সংলাপে আমন্ত্রণ জানালেও অংশ নেয় ডজন তিনেক সংস্থার প্রতিনিধি। ইসির কর্মকর্তারা বলেন, গত অক্টোবরে নিবন্ধনে আগ্রহী পর্যবেক্ষক সংস্থার কাছে আবেদন আহ্বান করা হয়।

৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১৯৯টি আবেদন জমা পড়ে। ছয় মাস পর চলতি মাস থেকে মে ২০২৩ সালের জন্য ১১৯টিকে বাছাই করে ইসি। ইসি যুগ্ম সচিব (জনসংযোগ পরিচালক) এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, কমিশনের অনুমোদনে আগামী ৫ বছরের জন্য এসব সংস্থা নিবন্ধিত হলো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা আবেদন করেছিল; তাদের মধ্য থেকেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ফেমা ও ব্রতী যথাসময়ে নিবন্ধন আবেদন করতে না পারায় পর্যবেক্ষক সংস্থায় তালিকাভুক্ত হয়নি। এ বিষয়ে ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বলেন, বিশেষ কারণে প্রথমে আবেদন জমা দিতে পারিনি। পরে সিইসির সঙ্গে দেখা করে, তার সম্মতি নিয়ে আবেদনসহ অন্যান্য কাগজপত্র দিয়েছি। তবে ইসির কাছে কারণ জানতে চাইব। কেননা ফেমা নিরপেক্ষভাবে দেশ-বিদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে। ফেমা দেশের সব থেকে পুরনো পর্যবেক্ষক সংস্থা বলে জানান সংস্থার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান। ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমীন মুরশিদ বলেন, বিস্মিত হচ্ছি- ১১৯টি সংস্থার তালিকায় ব্রতী নেই। কী করে ব্রতীকে বাদ দেওয়া হলো? ১১৯ সংস্থার তালিকায় অনেক নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। এর আগে ইসি আমাদের বলেছে, আপনাদের আবেদন পেয়েছি। ব্রতী-ফেমাকে বাদ দেওয়াটা ইসির জন্য স্বস্তিকর হবে না। জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের পর থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম চালাচ্ছে ব্রতী। ফেমা ১৯৮৫-৮৬ সাল থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে। সর্বশেষ খুলনা সিটি নির্বাচনের প্রতিবেদনও কমিশনকে দিয়েছে সংস্থাটি। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন চালু হয়। ২০০৮ সালে ১৩৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয় তৎকালীন ইসি। তখন নিবন্ধনের মেয়াদ ছিল এক বছর। পরে এ মেয়াদ পাঁচ বছর করে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। ২০১১ সালে ১২০টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। এসব সংস্থার নিবন্ধনের মেয়াদ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শেষ হওয়ার পর কমিশন তা আরও এক বছর বাড়ায়। এ অবস্থায় গত বছর পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ছিল তারা। চলতি জুন থেকে ৫ বছরের জন্য ১১৯টি নিবন্ধন পেল। এর মধ্যে গতবারের অনেকেই নেই। দক্ষতার সঙ্গে ইসির কমিটি যাচাই করলে যোগ্য কেউই বাদ যেত না।

সর্বশেষ খবর