রবিবার, ১০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

জামিন নিতে তৎপর কিলার আলমাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

জামিন নিতে তৎপর কিলার আলমাস

রূপগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতা হাসান মাহমুদ রুবেল হত্যা মামলার প্রধান আসামি চিহ্নিত সন্ত্রাসী, বহু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী বলে অভিযুক্ত আলমাসকে জামিন করাতে তৎপর একটি শক্তিশালী চক্র। জামিনের জন্য বিচারকের নাম করে রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও মাদক কারবারিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চাঁদাবাজির এই টাকা সংগ্রহ করছেন তার স্ত্রী মমতাজ বেগম। জানা গেছে, তাকে জামিন করাতেই এ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। মমতাজ বেগমই জামিনের জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে টাকা নিয়ে দফারফা করছেন বলে প্রচার আছে। আলমাছ ২৭ মে থেকে আত্মগোপনে আছে। ওই দিন ছাত্রলীগ নেতা রুবেলকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জানা গেছে, মাদক কারবারে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে ২৭ মে রাতে রূপগঞ্জের নিজ বাড়িতে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক মেধাবী ছাত্রনেতা রুবেলকে। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলার মাছিমপুর এলাকার নসুর উল্লাহ মুন্সীর ছেলে তোফায়েল আহমেদ আলমাস ওরফে কিলার আলমাস এবং তার বাহিনীর সুরুজ, নয়ন, কাজল, মাসুদা, খোকনসহ ২০-২৫ জন মিলে রুবেলকে হত্যা করে। এ ঘটনায় রুবেলের বড় ভাই মোমেন মিয়া বাদী হয়ে কিলার আলমাসকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় কিলার আলমাস ৩১ মে হাই কোর্টে জামিন আবেদন করলে আদালত তাকে ১০ জুনের মধ্যে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করার নির্দেশ দেয়। এ আদেশের পর থেকে কিলার আলমাস কোটি টাকার বিনিময়ে হলেও জামিন নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দেনদরবার করছে বলে এলাকায় প্রচারণা রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আলমাস মুড়াপাড়া এলাকায় এক মূর্তিমান আতঙ্ক। আলমাস ও তার বাহিনীর কাছে জিম্মি মুড়াপাড়া ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। তার বাহিনী দাপিয়ে বেড়ায় পুরো এলাকা। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সে হয়ে উঠেছে আরও বেপরোয়া। মুড়াপাড়া অঞ্চলে শিল্প-কারখানায় চাঁদাবাজি, মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, মানুষের জমি দখল, জমি দখল করে নিজের নামে মাছের খামার তৈরি, কৃষিজমির মাটি ইটভাটায় বিক্রিসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা আলমাস ও তার বাহিনীর লোকজন করছে না। প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান জামাল হাজির ছেলে মুড়াপাড়া কলেজের সাবেক ভিপি খালেদ বিন জামালের হাত ধরে নব্বইয়ের দশকে আলমাসের উত্থান। সন্ত্রাসী হামলায় ১৯৯১ সালে খালেদ নিহত হলে সবকিছু চলে যায় আলমাসের নিয়ন্ত্রণে। এরই একপর্যায়ে ২০০০ সালে দিনদুপুরে রাসেল পার্কের ভিতর আলমাস ও তার সহযোগীরা প্রকাশ্যে হত্যা করে বিএনপি নেতা ও শিল্পপতি রাসেল ভূঁইয়াকে। সেই মামলায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রায়ে তার ফাঁসির আদেশ হলে উচ্চ আদালতে আপিল করে সে। ২০০৪ সাল থেকে আলমাস আবার ফিরে আসে পুরনো ধান্দায়। শুরু করে বিভিন্ন মিল-কারখানার মালিকদের জমিজমা জবরদখলে সহযোগিতা। পাশাপাশি অস্ত্রের ব্যবসা শুরু করে গড়ে তোলে অস্ত্রধারী বাহিনী। গত পৌর নির্বাচনের আগে নিজের স্ত্রীকে প্রার্থী করাকে কেন্দ্র করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়ার সঙ্গে এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরোধ দেখা দেয়। এ বিরোধের জের ধরে বিএনপির সমর্থক হয়েও এমপি গাজীর কাছাকাছি পৌঁছায় আলমাস। মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের সমর্থন আদায় করে সে। ওই সময় সে নিজ দলের সমর্থক জাহাঙ্গীরকে হত্যা করে কৌশলে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জাব্বারসহ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নামে হত্যা মামলা করায়। ওয়াটা কেমিক্যালের বালু ভরাটকে কেন্দ্র করে সে হত্যা করায় মুড়াপাড়া সৈনিক লীগের সভাপতি তারা মিয়াকে। প্রাণ-আরএফএল, প্রভিটা, ওয়াটা কেমিক্যাল, সিম ফেব্রিকস, লিনা পেপার, এসিআই সল্ট, নিসু কুটি টিস্যুপেপার, দড়িকান্দি ডকইয়ার্ডসহ শিল্প-কারখানায় শুরু করে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। এ ছাড়া মুড়াপাড়া ইউনিয়নসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ, জমি জবরদখল, ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রিসহ নানা অপকর্মে মেতে ওঠে কিলার আলমাস।

রূপগঞ্জ থানার একটি সূত্র জানায়, ২০০৭ সাল পর্যন্ত টানা সাত বছর কিলার আলমাস ছিল থানার শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায়। ২০০৪ সালে বানিয়াদী এলাকার শমসের, ২০০৮ সালে মীরকুঠিরছেও এলাকার নয়ন, ২০১২ সালে ছাত্রদল নেতা নজরুল ইসলাম বাবু, ২০১৩ সালে তার বাবা জালাল ও একই বছর যুবলীগ নেতা শওকতকে খুনের পেছনে রয়েছে আলমাস ও তার বাহিনীর নাম। সে যে এলাকা দিয়ে চলাচল করত সে এলাকার মানুষ নিশ্চুপ হয়ে যেত। চলাফেরা করত চারজন অস্ত্রধারী বডিগার্ড নিয়ে।

সর্বশেষ খবর