শনিবার, ২৩ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

বন্যার পর বেরিয়ে আসছে ক্ষতবিক্ষত রাস্তাঘাট

মৌলভীবাজার

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার

বন্যার পর বেরিয়ে আসছে ক্ষতবিক্ষত রাস্তাঘাট

বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর বেরিয়ে আসছে ক্ষতবিক্ষত রাস্তাঘাট —বাংলাদেশ প্রতিদিন

মৌলভীবাজারে বন্যার পানি কমছে। এর সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে আসছে ভয়ঙ্কর ক্ষতবিক্ষত রাস্তাঘাট। বন্যা শুধু রাস্তাঘাট নয়, বিধ্বস্ত করেছে জনপদের অনেকাংশ।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যাকবলিত এলাকার প্রধান সড়কসহ অলিগলির অধিকাংশ রাস্তার এখন বেহাল দশা। পানির তীব্র তোড়ে রাস্তাগুলো ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে গেছে। তিন দশকের ভয়াবহ পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট এই প্লাবনে মৌলভীবাজারের যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় অচল করে দিয়েছিল। মৌলভীবাজার সদরের সঙ্গে সিলেট সদর ও উপজেলাগুলোর যোগাযোগ বন্ধ ছিল কয়েক দিন। পানি নামতে শুরু করায় এখন বেরিয়ে আসছে পানিতে তলিয়ে থাকা ধ্বংসস্তূপ। ১২ জুন শুরু হওয়া প্লাবনের তাণ্ডবে জেলার রাস্তাঘাটের ক্ষতি আনুমানিক কয়েক কোটি টাকার হতে পারে বলে ধারণা করছে এলজিইডি ও সড়ক বিভাগ। এলজিইডি কার্যালয় সূত্র জানায়, তাদের মোট ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার পাকা সড়কের অন্তত ৪০০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এসব সড়ক সংস্কার ও মেরামতের জন্য অন্তত শত কোটি টাকার বেশি অর্থ লাগতে পারে। যোগাযোগব্যবস্থার সংকটের জন্য সব জায়গায় যাওয়া যাচ্ছে না, তাই ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ পরিসংখ্যান তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, মনু নদ ও ধলাই নদীর ২৫টি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার ৩০টি ইউনিয়ন এবং কমলগঞ্জ ও মৌলভীবাজার পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানির তোড়ে বিভিন্ন পাকা সড়কের ওপর বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম জানান, বন্যার পানিতে চার উপজেলায় ছোট-বড় অনেক সড়ক তলিয়ে ছিল। পানির তোড়ে সড়কের পিচ, খোয়া ও মাটি ভেসে গেছে। সড়কগুলোর মুখে ও বিভিন্ন স্থানে বিশাল বিশাল গর্ত হয়েছে। এর মধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা সদর থেকে আদমপুর, আদমপুর-ইসলামপুর, আদমপুর-মাধবপুর, ভানুগাছ-মাধবপুর সড়কের ওপর দিয়ে ধলাই নদীর পানির তীব্র তোড় গড়িয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করায় রাস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার অধিকাংশ পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, মৌলভীবাজার পৌরসভার বারইকোনা এলাকায় মনু নদের শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে শহরের পশ্চিমাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। এতে বারইকোনা, ধরকাপন, বরকাপন, দ্বারক, হিলালপুর, শেখেরগাঁও, দর্জিরমহল, গোবিন্দশ্রীসহ পৌরসভার ৬, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড বন্যাকবলিত হয়। এ পানি গড়িয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ও কনকপুর ইউনিয়নের মোস্তফাপুর, খিদুর, বাহারমর্দান, লামা জগন্নাথপুর, রংদাস, ঘড়ুয়া, সম্পাশী, ইসলামবাগ, পাগুরিয়া এলাকাসহ বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত করে। হিলালপুরের মো. আমির মিয়া বলেন, ‘আমাদের বাড়ি যাওয়ার রাস্তার পূর্ব হিলালপুর-খিদুর সড়কের প্রায় ২ হাজার হাত এলাকার সম্পূর্ণ পিচ উঠে গেছে। রাস্তার পানি নামার পর বিভিন্ন স্থানে গর্ত হয়ে গেছে।’

মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘বারইকোনা এলাকায় দেড় শ ফুটের মতো ভেঙে গেছে। পৌরসভার উদ্যোগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহযোগিতায় এ বাঁধ মেরামত শুরু করেছি। পৌরসভার রাস্তাগুলো ভয়াবহভাবে ভেঙে গেছে।’ মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, বন্যার তাণ্ডবে সওজের রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্টের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিভিন্ন সড়কে ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার স্থানে বন্যার পানি উঠেছিল। তবে সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে আরও কিছু সময় লাগবে।

তিনি জানান, মৌলভীবাজার-শমসেরনগর-চাতলাপুর শুল্ক স্টেশন সড়কটি সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সড়কের শরিফপুর ইউনিয়নের মনু নদের সেতুর পাশে একটি বড় কালভার্ট দেবে গেছে এবং প্রায় ৪০ মিটার সড়ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে; যার কারণে চাতলা শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সেই কালভার্টটির মেরামত কাজ চলছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজার-কুলাউড়া, ব্রাহ্মণ বাজার-শমসেরনগর, রবির বাজার-পীরের বাজার, জুড়ি-ফুলতলা ছাড়াও মৌলভীবাজার পৌরসভার যোগীডর এলাকার বাস টার্মিনালের কাছে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম পাশের প্রায় ২০০ ফুটের মতো রাস্তা ভেঙে পড়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে মেরামত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর