শনিবার, ২৩ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

এবার এমপি আজাদের প্রতি অনাস্থা বকশীগঞ্জ আওয়ামী লীগের

জামালপুর প্রতিনিধি

জনবিচ্ছিন্নতা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালানোসহ বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে জামালপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। টিআর, কাবিখা কাজে বার বার গুটিকয়েক মানুষকে বেছে নেওয়াসহ একলা চলো নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে নির্বাচনী এলাকা দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ।

তারা বলেছেন, প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় টিম ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে নিরপেক্ষ জরিপ করে এই আসনে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া হোক। এই সংসদীয় আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত পাঠানো হয়েছে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে। সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ এপ্রিল বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জালালউদ্দিন বলেন, এই উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দলীয় প্রার্থীকে বাদ দিয়ে প্রতিটি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনেও তিনি একই কাজ করেন। তার এই অবস্থানের কারণে দলের প্রার্থী হেরে যান, আর জিতে যান বিএনপির প্রার্থী। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, দলীয় মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হলেও দলের সঙ্গে আবুল কালাম আজাদের কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই। এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তৃণমূলে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীর সঙ্গেই তার কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো নেতা-কর্মীর খোঁজও রাখেন না তিনি। টিআর, জিআর, কাবিখাসহ সব উন্নয়ন কাজ করান নিজের লোক দিয়ে। তিনি আরও বলেন, তার কর্মকাণ্ডে দলের সঙ্গে কোনো সমন্বয় নেই। তিনি শুধু দল নয়, জনবিচ্ছিন্নও হয়ে পড়েছেন। আগামী নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তার ভরাডুবি ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে। এজন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় সভায় প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সবাই ঐকমত্য হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইসমাইল হোসেন বাবুল তালুকদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আবুল কালাম আজাদ নৌকার প্রার্থী হিসেবে এমপি হলেও তৃণমূলের সব নির্বাচনে তিনি নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বকশীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ছিলেন শাহিনা বেগম। কিন্তু এমপি আবুল কালাম আজাদ বিদ্রোহী প্রার্থী এক সময়ের যুবদল নেতা নজরুল ইসলাম সওদাগরের পক্ষ নেন। ফলে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর অবস্থান গিয়ে ঠেকে তৃতীয়তে। উপজেলা নির্বাচনেও তিনি নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বকশীগঞ্জের প্রতিটি ইউনিয়নেই এমপি আবুল কালাম আজাদ নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ফলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা কোনোভাবেই আর তাকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায় না। শুধু বকশীগঞ্জ নয়, এমপি আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে দেওয়ানগঞ্জেও। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এমপি আবুল কালাম আজাদের দুর্ব্যবহার ও একগুঁয়েমি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সবাই তার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। দলের সঙ্গে তার কোনো সমন্বয় নেই। শুধু তাই নয়, স্থানীয় নির্বাচনে এমপি আবুল কালাম আজাদ সরাসরি নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তার নিজের ভাতিজাকে পৌরসভার মেয়র পদে দাঁড় করিয়ে প্রকাশ্যে মাঠে নামেন। তিনি আরও বলেন, এ অবস্থায় দলের স্বার্থেই দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সব অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মী আগামী নির্বাচনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। একই কথা বলেছেন দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইশতিয়াক হোসেন দিদারও। এসব অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটু ব্যস্ত আছি আধা ঘণ্টা পর ফোন দেন। পরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সর্বশেষ খবর