শনিবার, ২৩ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

নরসিংদীতে দুই সন্তানকে হত্যার পর পিতার আত্মহত্যা

নরসিংদী প্রতিনিধি

দরিদ্রতা, ঋণগ্রস্ত ও মামলায় পরাজিত হয়ে ক্ষোভে-দুঃখে হতাশাগ্রস্ত হয়ে দুই সন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন এক পিতা। এমন দাবি পুলিশ ও নিহতের পরিবারের। গতকাল ভোর রাতে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার তুলাতলী গ্রামে এ হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। স্বামী-সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় স্ত্রী সাদিয়া বেগম। নিহতরা হলেন— অটো রিকশাচালক কাজল মোল্লা (৩২), তার মেয়ে কাকলী আক্তার (৮) ও ছেলে সোয়ান মোল্লা (৫)।

ময়মনসিংহের নান্দাইল এলাকার জনৈক রুহুল আমিনের কাছে বিদেশ গমনের জন্য সাড়ে ৬ লাখ টাকা দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন কাজল। বৃহস্পতিবার সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে নরসিংদী কোর্টে মামলায় হেরে যান কাজল। এতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে সন্তানদের নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সম্পত্তি নিয়ে ভাইদের সঙ্গে কোনো রকম শত্রুতা রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।  পুলিশ জানায়, কাজল মোল্লা প্রায় তিন বছর ধরে নরসিংদী শহরে অটোরিকশা চালাতেন। বিদেশে যাওয়ার জন্য রুহুল আমিন নামে একজনকে টাকা দেন কাজল। রুহুল আমিন টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করায় কাজল তার বিরুদ্ধে নরসিংদী আদালতে মামলা করেন। বৃহস্পতিবার মামলার রায় কাজলের বিপক্ষে যায়। মামলা হেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ওই দিনই সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে সন্তানদের নিয়ে বেরিয়ে আসেন কাজল। গতকাল সকালে স্বজনরা খবর পান বাড়ির খানিকটা দূরে তুলাতুলী ঈদগাহ মাঠ-সংলগ্ন স্থানে কাজল তার দুই সন্তানকে হত্যা করে তিনিও আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে সকাল ১০টার দিকে রায়পুরা থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন। নিহত কাজল মোল্লার বড় ভাই সামসু মোল্লা জানান, প্রায় তিন বছর ধরে শ্বশুরবাড়িতে থাকত কাজল। মাঝে মধ্যে খোঁজখবর নিতে বাড়িতে আসত। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে দুই সন্তানকে নিয়ে আসে এবং আমাদেরকে দেখে সন্ধ্যার পর চলে যায়। পরের দিন সকালে খবর পাই আমাদের বাড়ির খানিকটা দূরে তার দুই সন্তানকে হত্যা করে সেও আত্মহত্যা করেছে।

এ সময় দুই শিশু সন্তানের লাশ একটি গর্তের পাশে জমে থাকা পানিতে পড়ে ছিল। আর কাজলের লাশ পাশেই একটি গাছের সঙ্গে ঝুলানো ছিল। নিহতের স্ত্রী সাদিয়া বেগম বলেন, দরিদ্রতা ছিল। তার পরও খেয়ে পরে যাচ্ছি। কিন্তু সে যে এমন ঘটনা ঘটাবে তা ভাবতেও পারিনি। রায়পুরা থানার ওসি (তদন্ত) লুত্ফর রহমান বলেন, বিদেশ যেতে না পেরে টাকা উদ্ধারের জন্য ঘুরতে ঘুরতে ঋণগ্রস্ত হয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন কাজল। নরসিংদী কোর্টে মামলায় হেরে যান। এতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে সন্তানদের নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্তের আগে এর বেশি বলা সম্ভব নয়।

সর্বশেষ খবর