শুক্রবার, ২৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

মাস্টারপ্ল্যানে সিলেট হবে আধুনিক : কামরান

মাস্টারপ্ল্যানে সিলেট হবে আধুনিক : কামরান

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছিলেন সিসিকের সাবেক এই মেয়র। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন ছয় নেতা। তবে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আস্থা রেখেছেন কামরানের ওপরই। সেই আস্থার প্রতিদান সিসিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে দিতে চান কামরান। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে সিলেটের রাজনীতির জনপ্রিয় মুখ বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘জাতির জনকের কন্যা নৌকা প্রতীক আমাকে আমানত হিসেবে দিয়েছেন। আমি সেই আমানতের মর্যাদা রেখে সিলেট সিটিতে নৌকা প্রতীকের বিজয় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে চাই।’  গত ২২ জুন দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই কামরান জোরেশোরেই নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছেন। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে তার রয়েছে নিজস্ব পরিকল্পনা। নির্বাচনে বিজয়ের পর সিলেট নগরীর উন্নয়নেও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে তার। কামরান বলেন, ‘সিলেটে মেয়র পদে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে দলের সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ। ছোটখাটো মতভেদ ভুলে সবাই কাজে নেমে পড়েছেন। সবাই পাশে আছেন, পরামর্শ দিচ্ছেন। সবার সহযোগিতা নিয়েই এবার নৌকার বিজয় নিশ্চিত করা হবে।’

সিসিকের গত তিন মেয়াদের মধ্যে প্রথম দুই মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন কামরান। তবে সর্বশেষ নির্বাচনে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে যান তিনি। তবে এবার নগর ভবনে মেয়রের চেয়ার পুনরুদ্ধার করতে চান কামরান। এজন্য পুরো আত্মবিশ্বাসী কামরান বলেন, ‘এই নগরবাসীর সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক, হৃদয়ের বন্ধন। এই নগরবাসীই আমাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। আমি সর্বদা তাদের সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে পাশে থেকেছি। আমার বিশ্বাস, নগরবাসী এবার নৌকার পক্ষেই রায় দেবেন।’ নির্বাচনে বিজয়ী হলে মেয়রের চেয়ারে বসে সিলেটকে আধুনিক হিসেবে গড়ে তুলতে চান আওয়ামী লীগের এই নেতা। কামরান বলেন, ‘সিলেট হচ্ছে আধ্যাত্মিক, পর্যটন ও প্রবাসী অধ্যুষিত নগরী। এই নগরীর উন্নয়নে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করব। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে করা হবে মাস্টারপ্ল্যান। সেই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করে সিলেট নগরীর চেহারাকে আমূল পাল্টে দিয়ে করা হবে আধুনিক ঝকঝকে।’ তিনি বলেন— ‘আগামী ৫০ বছরের চিন্তাকে সামনে রেখে মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা অনেক শ্রম দিয়ে সে প্ল্যান করেছিলেন। কিন্তু আমি সেটা বাস্তবায়ন করার সময় পাইনি, আরিফ সাহেবও এসে সেটায় হাত দেননি। এবার বিজয়ী হতে পারলে সেই মাস্টারপ্ল্যানকে আরও যুগোপযোগী করে বাস্তবায়নের যথাযথ উদ্যোগ নেব।’ বর্তমানে সিলেট নগরীতে জলাবদ্ধতা, ছড়া-খাল দখল হয়ে থাকা, যানজট, বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রভৃতি নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধানকল্পে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে মন্তব্য কামরানের।

 তিনি বলেন, ‘আমি যখন মেয়র ছিলাম, তখন জলাবদ্ধতা নিরসনে মাত্র ১১ কোটি টাকা পেয়েছিলাম। সে টাকা দিয়েই সঠিক পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করেছিলাম বলে পরবর্তীতে নগরীতে জলাবদ্ধতা কমে আসে। আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র হয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে পেয়েছেন ২৩৬ কোটি টাকা। কিন্তু সে টাকা দিয়ে পরিকল্পনামাফিক কাজ হয়নি বলে জলাবদ্ধতা এখনো রয়ে গেছে। এবারের নির্বাচনে আমি বিজয়ী হতে পারলে ছড়া ও খাল দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করে সেগুলোর সংস্কার করে জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নিরসনের সঠিক উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

সিলেট নগরীতে রয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। সেই সংকটের সমাধানকল্পে গত মেয়াদে প্রায় ১৫০ কোটি টাকায় নগরীর কুশিঘাটে একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করার প্রকল্প নিয়েছিলেন বলে দাবি কামরানের। তিনি বলেন, ‘আমি মেয়র থাকাকালে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ প্রায় ৭৫ ভাগ শেষ হয়েছিল। এই প্লান্ট করার লক্ষ্য ছিল নগরীর দক্ষিণ সুরমার তিনটি ওয়ার্ডে যে পানির সংকট আছে তা সমাধান করা এবং উত্তর সুরমায়ও কিছু পানি সরবরাহ করা। কিন্তু আরিফ সাহেবের মেয়াদে দক্ষিণ সুরমার মানুষ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে পানি পাননি। এবার যদি নগরবাসী আমার পক্ষে রায় দেন, তবে পানির সংকট পুরোপুরি সমাধান করতে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে কাজ করব।’ সিলেট নগরীর ফুটপাথ দখল হয়ে থাকা নগরবাসীকে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়। হকাররা ফুটপাথ ছাড়া সড়কের একটি অংশও দখল করে বসে থাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেন কামরান, ‘ফুটপাথ হচ্ছে জনগণের। এখানে বসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অধিকার কারও নেই। যেসব হকার ফুটপাথ দখল করে আছেন, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে ফুটপাথকে দখলমুক্ত করা হবে।’ সিলেট নগরবাসীর বিনোদনের জন্যও যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলছেন কামরান, ‘নগরবাসীর জন্য সুস্থ বিনোদনের প্রয়োজন। আমি মেয়র থাকাকালে নগরীতে দুটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলাম, সুরমা নদীর ক্বিনব্রিজ এলাকায় দুই পাশে সৌন্দর্যবর্ধন করেছিলাম। এবার আরও বৃহৎ পরিসরে নগরবাসীর বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই।’ নির্বাচনে বিজয়ী হতে প্রত্যয়ী কামরান সিলেট নগরীকে মাদকমুক্ত করা, আবর্জনার জঞ্জালমুক্ত করা, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, নগরীকে আরও বেশি পর্যটনবান্ধব করা এবং যুবসমাজকে অবক্ষয় থেকে রক্ষা করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেন।

সর্বশেষ খবর