শিরোনাম
শুক্রবার, ২৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

আমার মেয়াদের মতো উন্নয়ন অতীতে হয়নি : আরিফ

আমার মেয়াদের মতো উন্নয়ন অতীতে হয়নি : আরিফ

সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা নিয়ে অনেক জল্পনাকল্পনা ছিল। বিএনপি থেকে ছয় নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকায় এবং জামায়াত এ সিটিতে প্রার্থী দিতে চাওয়ায় ছিল নানামুখী কানাঘুষা। সিসিকের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মনোনয়ন পাওয়া নিয়েও ছিল সন্দেহ-সংশয়। তবে গতকাল সব গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে আরিফকেই ফের দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। দ্বিতীয়বারের মতো দলীয় মনোনয়ন পাওয়া আরিফ চলতি মেয়াদে করা উন্নয়নের ‘সেতু’ দিয়ে সিসিকের আগামী নির্বাচনের ‘নদী’ পার হতে চান। আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য। সিসিকের গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়রের চেয়ারে বসেন আরিফ। এবার দ্বিতীয়বারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানালেন তিনি, ‘টানা দ্বিতীয়বারের মতো দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি এজন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। দল যে বিশ্বাসে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, সেই বিশ্বাস রাখতে চাই। দলের সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে লড়ে সিলেট সিটিতে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করব ইনশা আল্লাহ।’ তিনি বলেন, আমার মেয়াদে সিলেট নগরীতে যে উন্নয়নযজ্ঞ হয়েছে, তা অতীতে হয়নি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সুনজরে থাকায় চলতি মেয়াদে মেয়র থাকাকালে সিলেট নগরীর উন্নয়নে বড় অঙ্কের বরাদ্দই পেয়েছেন আরিফ। সেই সব বরাদ্দ দিয়ে নগরীতে বেশকিছু উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরিফ বলেন, ‘বিগত নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকে আমি নগরীর উন্নয়নে সময় ব্যয় করেছি। কীভাবে এ নগরীকে আরও আধুনিক, আরও উন্নত করা যায়, তা নিয়েই কাজ করেছি। নির্বাচিত হয়ে আমি সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যাপক কাজ করেছি। যখন মেয়র হই, তখন নগরীর সব এলাকা বৃষ্টি হলেই হাঁটু বা কোমর পানির নিচে চলে যেত। আমি দীর্ঘদিন ধরে দখল হয়ে থাকা ছড়া ও খাল দখলমুক্ত করতে একের পর এক অভিযান চালিয়েছি। প্রভাবশালীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ছড়া-খালের সঠিক সীমানা নির্ধারণ করে সেগুলো দখলমুক্ত করায় এবং ড্রেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখায় সিলেট নগরীতে এখন জলাবদ্ধতা হয় না। বৃষ্টি হওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যেই এখন পানি নেমে যায়। তবে অতিবৃষ্টি হলে একটু সমস্যা হয়। আবার যদি নির্বাচিত হই, তবে এই সমস্যাও থাকবে না।’ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে সুরমা নদী খননের প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

 

চলতি মেয়াদে নগরীতে উন্নয়নযজ্ঞ সম্পন্ন হয়েছে মন্তব্য করে আরিফ বলেন, ‘পুরো নগরীকে যানজটের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে গুরুত্বপূর্ণ সব সড়ক সম্প্রসারণ করেছি। ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে বারবার অভিযান চালিয়েছি, সিলেটের সর্বস্তরের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে সহযোগিতা চেয়েছি। কিন্তু একটি বিশেষ গোষ্ঠী ফুটপাথ দখলদারদের মদদ দেয়। এই গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণকর্তা কারা, তা গোয়েন্দাদের ভালো করেই জানা থাকার কথা। কিন্তু নিয়ন্ত্রণকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।’ আরিফ বলেন, ‘নগরীর খাবার পানির সংকট দূর করতে কুশিঘাটে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণ করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রায় এক কোটি লিটার পানি প্রতিদিন নগরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া নগরীতে বেশ কয়েকটি গভীর নলকূপ স্থাপন করেছি আমরা। পানির সংকট পুরোপুরি সমাধান করতে সিলেটের সীমান্তবর্তী সারি নদী থেকে নগরীতে পানি আনার একটি প্রকল্প আমরা গ্রহণ করেছি। এতে প্রায় সাড়ে ছয়শ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরীতে পানির সমস্যা আর থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘যানজট নিরসনে আমি নগরীতে রিকশা লেন করেছিলাম। এতে রিকশা লেনে চলত, সড়কে যানজট থাকত না। কিন্তু আমি ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় কারান্তরীণ হওয়ার পর সেই লেন তুলে দেওয়া হয়। যার ফলে যান চলাচলে বিশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরে আসে। ফের মেয়র নির্বাচিত হতে আত্মবিশ্বাসী আরিফ বলেন, ‘আমার মেয়াদে সিলেট নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনে ব্যাপক কাজ করেছি। সৌন্দর্যবর্ধনে নগরীর বিভিন্ন সড়কের ডিভাইডারকে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। নগরবাসীকে বিনোদনের সুযোগ দিতে ধোপাদিঘীরপাড় এলাকায় অত্যাধুনিক পার্ক হচ্ছে। দক্ষিণ সুরমায় সাইফুর রহমান পার্কে রাইড বসানো হচ্ছে। আমরা জালালাবাদ পার্কের সংস্কার ও আধুনিকায়ন করেছি।

 জিন্দাবাজার এলাকায় জিন্দা ছড়ার দুই পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে ওয়াকওয়ে। নগরীকে ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল থেকে মুক্ত করতে বড় আকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সব ধরনের ক্যাবল মাটির নিচে চলে যাবে। সিলেটের সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনালকে আধুনিকায়ন করা, নগরীর সুয়ারেজ ব্যবস্থাকে উন্নত করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করাসহ বিভিন্ন প্রকল্প আমরা গ্রহণ করেছি। নগরীর হাসান মার্কেট এলাকায় আধুনিক পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনাও আমার রয়েছে। এ ছাড়া নগরীতে একটি আইসিটি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়াদে সিলেট নগর ভবনের কার্যক্রমকে অনলাইনে নিয়ে গেছি। এখন নগরবাসী ঘরে বসেই পানির বিল, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্স পরিশোধ করতে পারছেন। এ ছাড়া জন্মনিবন্ধন, লাইসেন্স প্রভৃতি সেবাও মিলছে অনলাইনে। এখন মেয়রকে খুঁজতে নগর ভবনে আসার প্রয়োজন নেই। বাসা থেকে বসে নগর অ্যাপস ব্যবহার করে মেয়র বা কাউন্সিলরের কাছে যে কোনো প্রশ্ন করা যাবে, অভিযোগ জানানো যাবে। সেসব দেখে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব। আমরা প্রায় ৭০ ভাগ অনলাইনে চলে গেছি। বাকিটাও হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।’

চলতি মেয়াদে করা উন্নয়ন কাজ এবারের নির্বাচনে নিজের পক্ষে কথা বলবে মন্তব্য করে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমার মেয়াদে সিলেট নগরীতে যে উন্নয়নযজ্ঞ হয়েছে, তা অতীতে হয়নি। নগরবাসীর স্বার্থেই আমি কাজ করেছি। আমার কাজ এবং উন্নয়নের বিচার করে এবারের নির্বাচনেও আমার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’ পরিকল্পিত নগরী গড়ার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে— উল্লেখ করে আরিফ বলেন, ‘আমি দেশ ও বিদেশের খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সিলেটকে আধুনিক পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়তে চাই।’ আওয়ামী লীগ নেতা বদরউদ্দিন আহমদ কামরান মেয়র থাকাকালে নগরীর উন্নয়নে যে মাস্টারপ্ল্যান করেছিলেন, সেই প্ল্যানকে ‘অবাস্তব’ বলে দাবি বিএনপি নেতা আরিফের। তিনি বলেন, ‘যে মাস্টারপ্ল্যান হয়েছিল, তা ছিল অবাস্তব। এটি অপরিকল্পিতভাবে হয়েছিল। দেশের খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এটির সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। সে মাস্টারপ্ল্যানে সড়ক কোথাও ৮০ ফুট, কোথাও ১২৫ ফুট প্রশস্ত করার কথা বলা হয়েছিল। এটি করতে গেলে সিলেট নগরীতে ভবন বলে কিছু থাকবে না। অবাস্তব হওয়ায় সে প্ল্যান বিবেচনা করতে বিশেষজ্ঞদের মতামতে সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম আমরা।

সর্বশেষ খবর