শুক্রবার, ২৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
সালমা বেগমের দৃষ্টান্ত

গ্রামে গ্রামে বাইসাইকেলে করে প্রাণী চিকিৎসা

দিনাজপুর প্রতিনিধি

গ্রামে গ্রামে বাইসাইকেলে করে প্রাণী চিকিৎসা

অভাবের কষাঘাত আর শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাইসাইকেলে করে গ্রামে গ্রামে ঘুরে পশু-পাখির চিকিৎসা সেবা দিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন খানসামার সালমা বেগম। কষ্টের জীবন থেকে আজ সফলতার জীবনে প্রবেশ করেছেন তিনি। এভাবে সালমা অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

সালমা বেগম দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের বালাপাড়ার মৃত সমজেদ আলীর মেয়ে। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় ১৯৯০ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী মজিবউদ্দিনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। স্বামীর অসুস্থতা, তার ওপর শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাদের আলাদা করে দেয়। তখন বেশ বিপাকেই পড়েন সালমা বেগম। অভাবের সংসারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে কাঁধে। সালমা জানিয়েছেন, এ অবস্থায় ১৯৯৫ সালে এক জনপ্রতিনিধির পরামর্শে ১ মাসের গবাদিপশুর টিকাসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণ নেন তিনি। তারপর এক পশু চিকিৎসকের সঙ্গে থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এরপর ১৯৯৬ সাল থেকে নিজেই বাইসাইকেলে করে গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিতে শুরু করেন। ২০০২ সাল থেকে তিনি পুরোদমে পশু-পাখির চিকিৎসা সেবায় নেমে পড়েন। প্রথমদিকে অনেকে তাকে ধমক কিংবা এ কাজ থেকে বিরত রাখতে নানা রকম চেষ্টা করেছে। কিন্তু সালমা তার আত্মপ্রত্যয় ও সাহসিকতা দিয়ে সামনে এগিয়ে যান। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আজ তিনি কাজে স্বাবলম্বী হয়েছেন। স্বামীও তাকে ভালোভাবে নিয়েছেন। সামনে তার একটি বড় মুরগির ফার্ম করার ইচ্ছা রয়েছে। জীবন সংগ্রামী আত্মপ্রত্যয়ী সালমা বেগম বলেন, নিজের ইচ্ছা শক্তি, শ্রমের সঠিক ব্যবহার এবং আত্মবিশ্বাসই আমাকে আজ এ স্থানে আসতে সাহায্য করেছে বলে মনে করি। অনেক কষ্ট আর গঞ্জনার পর সফলতা পেয়েছি। প্রথমে বাইসাইকেলে করে কাইয়ুম, বালাপাড়া ও যুগিরপক্ষ গ্রামে শুরু করি এই চিকিৎসা সেবা। এরপর বাইসাইকেলে করে গ্রামে গ্রামে ঘুরে পশু-পাখির বিভিন্ন টিকাসহ প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। আমি বাড়িতে গিয়ে টিকা দিতে হাঁস-মুরগি প্রতি ২ টাকা, ছাগল প্রতি ৫ টাকা ও গরু-মহিষ প্রতি ১০ টাকা গ্রহণ করি। এখন প্রতি মাসে আমার প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় হয়। কিছুদিন আগে এই কাজের জন্য সংবর্ধনা দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর দিনাজপুর। তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে আমার দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করার স্বপ্ন দেখছি। শিগগিরই একটি বড় মুরগির ফার্ম করার চেষ্টা করছি।

সর্বশেষ খবর