শুক্রবার, ২৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পুঁজিবাজার

আলী রিয়াজ

দীর্ঘদিন পর চাঙা মেজাজে ফিরছে শেয়ারবাজার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন হার গত কয়েক দিনে বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। গত ছয় মাসে ডিএসইর লেনদেন গড় ছিল সাড়ে তিন শ কোটি টাকার কাছাকাছি। সর্বোচ্চ লেনদেন ছয় শ কোটি টাকা ছাড়ায়নি। গত এক সপ্তাহে সে চিত্র পাল্টে গিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন বাজেটে শেয়ারবাজার সম্পর্কে ইতিবাচক কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণার প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। তবে গুজব ছড়িয়ে কিছু জাঙ্ক শেয়ারের দর বাড়ানোর অভিযোগও রয়েছে। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন ছয় শ কোটি টাকার ওপর যায়নি। এর মধ্যে বেশির ভাগ দিনই লেনদেন হয়েছে তিন শ কোটি টাকার নিচে। চলতি জুন মাসের শুরু থেকে বাজেট ঘোষণার পরও বেশির ভাগ দিন ডিএসইর লেনদেন বাড়েনি। দরপতন ছিল প্রায় ধারাবাহিক। তবে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে লেনদেনের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজার বিষয়ে নেওয়া বিভিন্ন প্রণোদনা ও পদক্ষেপ উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন। এর প্রভাবে ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ারবাজার। গতকালের বাজার লেনদেনে দেখা গেছে, ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮০১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যা আগের দিন বুধবার থেকে ৯৮ কোটি টাকা বেশি। আগের দিনও লেনদেন হয়েছিল ৭০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই দিনে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। গত এক সপ্তাহের লেনদেনে দেখা গেছে, প্রতিদিন দিন সাড়ে ছয় শ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। চলতি বছরে মাসভিত্তিক গড় লেনদেনে দেখা গেছে, জানুয়ারিতে চার শ কোটি, ফেব্রুয়াতিতে সাড়ে তিন শ কোটি, মার্চে তিন শ কোটি, এপ্রিলে সাড়ে তিন শ কোটি, মেতে চার শ কোটি, জুনের শুরুতেও চার শ কোটি টাকায় ছিল লেনদেন। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছয় শ কোটি ছাড়িয়ে সাত থেকে আট শ কোটি টাকায় লেনদেন হয়েছে। এই সময় ডিএসইর বাজার মূলধনও বেড়েছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। অপর শেয়ারবাজার সিএসইতেও লেনদেন বেড়েছে। সিএসইতে গতকাল লেনদেন হয়েছে ১৭৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকার। যা আগের দিন বুধবার থেকে ১৩৭ কোটি টাকা বেশি। সর্বশেষ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দাঁড়িয়েছে ৫৪০৫ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ও ডিএসই-৩০ সূচক দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১২৬৩ ও ১৯৫৯ পয়েন্টে।

জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজেটের কিছু প্রভাব পড়েছে। অনেক বিনিয়োগকারী এখন আকৃষ্ট হচ্ছে শেয়ারবাজারে। এ ছাড়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর গত ছয় মাস ধরেই কমছে। ফলে এগুলো এখন বাড়তে পারে এসব সম্ভাবনায় অনেকে লেনদেন করছেন। বর্তমান বাজারের পরিস্থিতি বিবেচনায় সূচক আরও বেশি থাকা উচিত। কিন্তু ছয় হাজার পয়েন্টের নিচেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এটাও শেয়ার লেনদেন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। এই ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে হলে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য বিএসইসিকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ২০১০ সালে যে মেরুদণ্ড ভেঙে পড়েছে সেটা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। বাজারে সাপোর্ট দিয়ে ভালো আইপিও নিয়ে আসা বা মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবহার করা যায়নি। আমাদের টিকে থাকতে হলে প্রতিদিন হাজার কোটি টাকা লেনদেন হতে হবে। ব্লক মার্কেটে লেনদেন বেড়েছে। এটা সাধারণ মার্কেটে বাড়াতে হবে।

মডার্ন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা নূরই নাহরিন বলেন, কিছু পলিসি পরিবর্তন দরকার। বর্তমানে তলানিতে রয়েছে শেয়ারবাজার। এখন লেনদেন না বাড়লে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। কয়েক দিন লেনদেন বাড়ছে এটা একটি ইতিবাচক দিক বলে আমি মনে করি।

সর্বশেষ খবর