শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
সংহতি সমাবেশে শিক্ষকরা

কোটা সংস্কার দাবির সমাধান সহজ ছিল

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

কোটা সংস্কারের দাবি সমাধান করা খুব সহজ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন শতকরা ৭৫ ভাগই কোটা থেকে নিয়োগ হয়। সরকার যদি দেখত আসলে কোটা থেকে কত ভর্তি হয়। যদি ২৫ ভাগের বেশি ভর্তি নাই-ই হয়, তাহলে তো কোটা সংস্কার করা খুব সহজ হয়ে যায়।

গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষকদের এক সংহতি সমাবেশে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ কথা বলেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-মামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকরা এ সংহতি সমাবেশের আয়োজন করেন। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৭৫ জন শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন বিভাগের চার শতাধিক শিক্ষার্থী সমাবেশে সংহতি জ্ঞাপন করেন। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কেন এই আন্দোলন হচ্ছে তা আমি বুঝতে পারছি না। বুঝতে পারতেন খুব সহজেই। লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী যারা আন্দোলন করছে তাদের সঙ্গে যদি একটা ঘণ্টা সময় দিতেন। কিংবা আপনি যদি শিক্ষকদের সঙ্গেও কিছু সময় কথা বলতেন, কিংবা তাদের লেখা, কথাবার্তা যদি আপনি শোনার চেষ্টা করতেন। তাহলে নিশ্চয় বুঝতে পারতেন এই দাবিগুলো কত দিনে জমানো ক্ষোভ থেকে এসেছে।

সরকারের নির্যাতনের মধ্য দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, এনএসএফের ভূমিকায় যদি ছাত্রলীগ অবতীর্ণ হয়, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোথায় থাকল? সেটা যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম করে হয় তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জন্য বড় অপমান আর কী হতে পারে? ‘প্রতিটি আন্দোলনে সরকার জামায়াত-শিবির পায়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াত-শিবিরের প্রতি সরকারের এতটা সার্ভিস জামায়াত-শিবির আর কোথাও পায়নি। সমস্ত ন্যায্য আন্দোলনের সঙ্গে জামায়াত-শিবির আছে— এত বড় স্বীকৃতি জামায়াত-শিবির আর কোথা থেকে পাবে? ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আহমেদ কামাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা এখনো ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেন, ছাত্রদের হয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলেন। ছাত্ররা ক্লাস করতে চায়। প্রক্টরের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাকে ভুলে যেতে হবে আপনি ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। একটু ভুলে যান। শিক্ষকতা করতে গেলে এটা ভুলতে হবে।

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, দ্বৈত প্রশাসনের অবসান ঘটাতে হবে।

হলগুলো থেকে সহপ্রশাসনকে বিতাড়িত করে প্রভোস্টকে দায়িত্ব দিতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সুষ্ঠু ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনা। এটা না হলে ছাত্ররাজনীতি আদর্শগত প্রতিযোগিতাভিত্তিক হবে না। তিনি অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থার আহ্বান জানান।

মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাসরীন ওয়াদুদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাকে ছাত্রলীগের একটা তকমা দেওয়া হয়েছিল যেটা নিয়ে আমি গর্ববোধ করতাম। এখন মনে হয় ছাত্রলীগ একটা গালি।

সংহতি সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্তির আস্বাদ দেওয়ার কথা, সেই বিশ্ববিদ্যালয়কে কারাগার বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসরে যেখানে ইতিহাস রচিত হয়েছে, বিভিন্ন আন্দোলনের সাক্ষী, সেই ইতিহাসকে অস্বীকার করে যারা কারাগার বানিয়ে তুলছে তাদের বিপক্ষে আমাদের বলতেই হবে।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নেহাল করিম, সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুত্ফা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর