শুক্রবার, ৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভোটের পর দুই সিটি

নৌকার ভরাডুবিতে ক্ষুব্ধ তৃণমূল

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট সিটি নির্বাচনে সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও পরাজয় হয়েছে নৌকার। টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজয়বরণ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। স্থগিত দুটি কেন্দ্রে ভোটের অপেক্ষায় থাকলেও আরিফই মেয়র পদে বিজয়ী হচ্ছেন। এটা প্রায় নিশ্চিত।

টানা দুইবার সিলেট সিটিতে আওয়ামী লীগের পরাজয়ে ক্ষুব্ধ দলটির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হওয়া সিটি নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবিতে স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর এখন ক্ষোভ ঝাড়ছেন তারা।

সিসিকের চতুর্থ নির্বাচনে মূল লড়াই হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরান ও বিএনপির আরিফের মধ্যেই। কামরান পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট, আরিফের ঘরে গেছে ৯০ হাজার ৪৯৬ ভোট। কামরানের চেয়ে ৪৬২৬ ভোটে এগিয়ে আরিফ। তবে দুটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত হওয়ায় আরিফকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন। ওই দুই কেন্দ্রে ভোট সংখ্যা ৪৭৮৭। আগামী ১১ আগস্ট এ দুই কেন্দ্রে নির্বাচন হবে। কামরানকে জয়ী হতে এ দুই কেন্দ্রে কমপক্ষে ৪৬২৭ ভোটারকে ভোট দিতে হবে এবং সব ভোট নৌকা প্রতীকে পড়তে হবে।  অর্থাৎ আরিফের জয় প্রায় নিশ্চিত। সিলেটে নৌকার এই পরাজয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা এখন ফুঁসছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাদের অভিযোগ, সিলেটে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে থাকলেও আড়ালে তারা ‘ভিন্ন খেলা’ খেলেছেন। নির্বাচনে স্থানীয় পর্যায়ে যেসব আওয়ামী লীগ নেতা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই জয় পেতে ধানের শীষের প্রার্থীর সঙ্গে আঁতাত করেছেন। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের এজেন্ট নিয়োগে সঠিকভাবে যাচাইবাছাই করেননি নেতারা। তাদের এই অবহেলার কারণে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকরাও নৌকা প্রতীকের এজেন্ট হয়েছিলেন। যারা ভোটের দিন ধানের শীষ বা স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হওয়া জামায়াত নেতার পক্ষে কাজ করেছেন। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুত্ফুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেলসহ স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ কয়েকজন নেতার কেন্দ্রে নৌকা পরাজিত হয়েছে। এ বিষয়ে সিলেট মহানগর যুবলীগের সদস্য আবদুল লতিফ রিপন বলেন, ‘সিলেটে আওয়ামী লীগের পরাজয় অপ্রত্যাশিত। এর পেছনে দলের কতিপয় নেতার চক্রান্ত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’ সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ালিউল্লাহ বদরুল বলেন, ‘সিলেটে নৌকা প্রতীকের এই পরাজয় অবিশ্বাস্য। দলের কতিপয় নেতা প্রকাশ্যে এক চেহারা আর গোপনে আরেক চেহারা দেখিয়েছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীদের কেউ কেউ নিজে জিততে গিয়ে নৌকা ডুবিয়ে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে সিলেটে পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ না করলে সংসদ নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’ সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কামরানের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নৌকার পরাজয়ে তৃণমূল ক্ষুব্ধ, এটা সত্য। তবে দলে ঐক্যের অভাব ছিল না, সমন্বয়ের হয়তো অভাব ছিল। প্রার্থীর কৌশল আমরা পরিচালনা কমিটি হয়তো জানতে পারিনি।’ তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীর বরাদ্দে আরিফ উন্নয়ন কাজ করেছেন। মানুষ এগুলো আরিফের উন্নয়ন হিসেবেই দেখেছে। উভয় প্রার্থীর উন্নয়নের বিচারে আরিফকে বেছে নিয়েছে মানুষ।’ সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটে নৌকার প্রচারে আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল বলে মনে হয়। যারা প্রচারণা চালিয়েছেন, তাদের অনেকেই ফটোসেশনেই ব্যস্ত ছিলেন। তাই নৌকার পরাজয় হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর