শুক্রবার, ৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

নিরাপত্তার স্বার্থে সন্তানদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নিন : বেনজীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রত্যেক অভিভাবককে তার সন্তানের নিরাপত্তার জন্য আমরা আহ্বান জানাব তার সন্তানকে কেউ যেন অপচেষ্টায় ব্যবহার করতে না পারে। সন্ত্রাসীরা এই সুযোগটা ব্যবহার করছে। অভিভাবকরা তাদের প্রিয় সন্তানের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নিন। প্রত্যেক স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষকমণ্ডলীকে আহ্বান জানাচ্ছি তারা নিজ নিজ স্কুলের শিক্ষার্থীরা যেন রাস্তায় আসতে না পারে এবং রাস্তায় এলেও যেন তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হয়। গতকাল বিকালে র‌্যাব সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব আহ্বান জানান র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ।

তিনি বলেন, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিকেও খেয়াল রাখতে হবে স্কুলছাত্রদের ব্যবহার করে কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী যেন স্বার্থ হাসিল করতে না পারে। কিছু কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছেন। তাদের অনুরোধ করব, আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করি। আইনের শাসনকে সবার শ্রদ্ধা করতে হবে। দুর্ঘটনার পর যেসব আইনি কার্যক্রম নেওয়া দরকার তা নেওয়া হয়েছে। এজন্য তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যেতে অনুরোধ করছি। একইসঙ্গে যারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেন তাদের অনুরোধ করব তাদের ছাত্ররা যেন লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন।

তিনি বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে উদ্ভট, মিথ্যা, বানোয়াট ভিডিও ছড়ানোর চেষ্টা করছে। আমরা সবাইকে বলব কোনো ধরনের গুজবে কান দেবেন না। গুজবে কান দিয়ে বিপথে পরিচালিত হবেন না। ঢাকা শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমরা আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই। যাতে প্রিয় এই শহরে সবাই নিরাপত্তায় বসবাস করতে পারি। সবাই মিলে প্রিয় শহরকে শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ করতে পারব বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এ ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা কামনা করেন র‌্যাব ডিজি বেনজীর আহমেদ।

র‌্যাবপ্রধান বলেন, শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহতের ঘটনায় আমাদের শোক প্রকাশের ভাষা নেই। এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। আমরা তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। যে দুটি নিষ্পাপ শিশু প্রাণ হারাল আমরা তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

তিনি বলেন, ২৯ জুলাই ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে আমরা সেই বেপরোয়া বাসের চারজনকে গ্রেফতার করেছি। যে বাসটি দিয়া ও রাজীবকে চাপা দেয় সেই বাসের চালককে পরদিন গ্রেফতার করা হয়েছে। বাসের মালিককেও গ্রেফতার করে আইনে সোপর্দ করেছি। আজকে (গতকাল) প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রত্যেককে ২০ লাখ টাকা করে অনুদান দিয়েছেন। দুর্ঘটনার বিষয়ে মামলা হয়েছে এবং গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে।

বেনজীর আহমেদ বলেন, চার দিন ধরে দলগতভাবে ঢাকা শহরকে অচল করার অপচেষ্টা চলছে। বিভিন্ন সুবিধাজনক গোষ্ঠীও তাদের সঙ্গে যোগ হচ্ছে এবং নিষ্পাপ শিশুদের ভিন্ন খাতে পরিচালনার চেষ্টা করছে। গত চার দিনে ৩১৮টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকালও ৯টি বাসে ভাঙচুর করা হয়েছে। ট্রাফিক সার্জেন্টদের ডেকে নিয়ে মারধর করা হচ্ছে।

সেগুনবাগিচায় একটি সরকারি অফিসে এবং কাঁচপুর থানায়ও হামলা করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, শিশুদের আবেদনময় যে বহিঃপ্রকাশ তাকে সম্বল করে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। চার দিন ধরে ঢাকার জনগণ তাদের কাছে জিম্মি। কেউ কোথাও যেতে পারছে না। পারছে না কর্মস্থলে যেতে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ দরকার।

বেনজীর আহমেদ বলেন, যেহেতু দুটি নিষ্পাপ প্রাণ চলে গেছে এর ভিত্তিতে যে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা গ্রহণ করা হয়েছে। মামলা হয়েছে, আসামি গ্রেফতার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহল ও বিশেষ গোষ্ঠী এই স্বতঃস্ফূর্ত সমবেদনা বা আবেগের বহিঃপ্রকাশকে ভিন্ন খাতে পরিচালনা করে গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছে।

সর্বশেষ খবর