শিরোনাম
শুক্রবার, ১০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

মুখ থুবড়ে পড়েছে নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র

নয় মাস ধরে বেতন বন্ধ কর্মীদের

জয়শ্রী ভাদুড়ী

স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার বার্তা নিয়ে ২০ বছর আগে যাত্রা করে নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে এর সব কার্যক্রম। নয় মাস ধরে বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এই প্রকল্পের কর্মীরা। একনেকে প্রকল্প পাস না হতেই টেন্ডার আহ্বান করায় উঠেছে অনিয়মের অভিযোগ। প্রকল্পসূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্পের আওতায় ১০টি সিটি করপোরেশন ও চারটি পৌরসভায় নাগরিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা হয়। মোট ২৫টি পার্টনারশিপ এলাকায় অবস্থিত ২৫টি সম্প্রসারিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, ১১২টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও ২২৪টি স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মাধ্যমে এ প্রকল্পের অধীনে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান চলছিল। এ প্রকল্পের সম্প্রসারিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো নগর মাতৃসদন ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র নামে পরিচিত। প্রকল্পের আওতায় টেন্ডারের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে অভিজ্ঞ বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে চলছিল স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের ১০ সিটি করপোরেশন ও সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জে এ প্রকল্প চলমান রয়েছে। গত বছরের জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। জানুয়ারিতে প্রকল্পের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর অনিশ্চতায় পড়েছেন সারা দেশে কর্মরত ২ হাজার ৯০০ কর্মী। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীদের এপ্রিল পর্যন্ত বেতন দিয়েছে এনজিওগুলো। কিন্তু ঢাকার বাইরের সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নয় মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না কর্মীরা। ২০ বছর ধরে চাকরিরত কর্মীরা পড়েছেন অসহায় অবস্থায়। এ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি না হওয়ায় এবং নতুন প্রকল্প না আসায় চাকরি নিয়ে টানাপোড়েন আছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মীরা। কোনো বেতন-বোনাস ছাড়াই এ পরিবারগুলো পার করেছে একটি ঈদ। এবারের ঈদেও বেতন-বোনাস মিলবে কিনা জানেন না তারা। রাজধানীর নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, ‘পরিবার নিয়ে দৈনন্দিন জীবনযাপন করতে হিমশিম খাচ্ছি। মাসে কোনো আয় ছাড়া কীভাবে বাঁচা সম্ভব। ২০ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে মানুষের সেবায় কাজ করে আসছি। অথচ আমাদের এই দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই।’ এদিকে প্রকল্প একনেকে অনুমোদন না হতেই আহ্বান করা হয়েছে টেন্ডার। এনজিওগুলো টেন্ডার অনুযায়ী জমা দিচ্ছে প্রকল্প প্রস্তাব। নতুন এই টেন্ডারে বেতন কাঠামো না থাকায় নতুন করে বিপদের আভাস পাচ্ছেন কর্মীরা। বেতন কাঠামো না থাকায় এনজিওগুলো যাকে যেমন ইচ্ছা বেতন দিতে পারবে। এভাবে বেতন কাঠামো বাদ দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ ও অভিযোগ। এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক আবদুল হাকিম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় বেতন নিয়ে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী একনেকে প্রকল্প অনুমোদন পেলে কর্মীদের পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হবে।’ প্রকল্প অনুমোদনের আগে টেন্ডার করার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ এগিয়ে রাখতে আগেও প্রকল্প অনুমোদনের আগে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল। এটা নতুন কিছু নয়। বেতন কাঠামোর বিষয়টি আমরা মানবিকভাবে বিবেচনা করব। চেষ্টা করব বেতন কাঠামো ফিরিয়ে এনে কর্মীদের সমস্যা সমাধান করতে।

সর্বশেষ খবর