শনিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

হুমকির মুখে কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য সম্পদ, বিলুপ্ত বহু প্রজাতির মাছ

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

হুমকির মুখে কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য সম্পদ, বিলুপ্ত বহু প্রজাতির মাছ

বাংলাদেশের প্রধান মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ। একটা সময় এ হ্রদকে মৎস্য প্রজাতির বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধশালী জলভাণ্ডার বলা হতো। কিন্তু ড্রেজিংয়ের অভাব, গভীরতা হ্রাস, পানি ও পরিবেশ দূষণের কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এ হ্রদের বহু প্রজাতির মাছ। হুমকির মুখে পড়েছে কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য সম্পদ।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, ১৯৬৪ সালে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে ২ প্রজাতির চিংড়ি, ১ প্রজাতির ডলফিন, ২ প্রজাতির কচ্ছপসহ ৭৬ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ ছিল। এরমধ্যে ৬৮ প্রজাতির দেশীয় ও ৮ প্রজাতির বিদেশি মাছ ছিল। এরপর নেমে আসে ৩২ প্রজাতিতে। আর বর্তমানে ২৩ প্রজাতির মাছ রাঙামাটি হ্রদ থেকে বাণিজ্যিকভাবে আহরিত হলেও তা থেকে বিলুপ্তের পথে আরও ৬ প্রজাতির মাছ। ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে- সীল, দেশি সরপুঁটি, ঘাউরা, বাঘাইড়, মোহিনী বাটা, দেশি পাঙ্গাস, দেশীয় মহাশোল, মধু পাবদা, পোয়া, ফাইস্যা, তেলে গুলশা, সাদা ঘনিয়া। ক্রম হ্রাসমান মাছের মধ্যে- রুই, কাতলা, মৃগেল, বাচা, পাতি গাবদা, বড় চিতল। কয়েক প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। রুই, কাতলা, মৃগেল মাছের আহরণের পরিমাণও আশঙ্কাজনক হারে কমে এসেছে। রাঙামাটি জেলা বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজী বেলাল উদ্দিন জানান, দীর্ঘ বছর ধরে হ্রদের ড্রেজিং না হওয়ার কারণে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন হুমকির মুখে পড়েছে। কারণ রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র ছিল-কাসালং চ্যানেলে মাইনীমুখ, বরকল চ্যানেলের জগন্নাথছড়ি, চেঙ্গী চ্যানেলের নানিয়ারচর ও রীংকং চ্যানেলের বিলাইছড়ি। এ চারটি নদীর চ্যানেলে মাছে সুষ্ঠু প্রজনন হতো। কিন্তু কাসালং চ্যানেলে মাইনীমুখ ও রীংকং চ্যানেলে পলি জমাটের কারণে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন বন্ধ হয়ে গেছে। রাঙামাটি জেলা মত্স্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াসিন জানান, কাপ্তাই হ্রদের অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হলেও নতুন করে সংযোজিত হয়েছে ৯ প্রজাতির মাছ। ২৫-৩০ বছর আগেই কাপ্তাই হ্রদে মাছের সুষ্ঠু প্রাকৃতিক প্রজনন ব্যাহত হয়ে পড়েছিল। তবে হ্রদে মাছের উৎপাদন বাড়াতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যাপ্ত পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ মত্স্য উন্নয়ন অধিদফতরের রাঙামাটি জেলা কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান আসাদ জানান, সঠিক ব্যবহারের অভাবে এই হ্রদের সম্পদকে সমৃদ্ধশালী করা যাচ্ছে না। তবে বিএফডিসি রাঙামাটির মারিশ্যার চরে একটি বিলা হ্যাচারি স্থাপন করেছে। এ হ্যাচারিতে মাছের প্রাকৃতিগতভাবে প্রজনন ঘটিয়ে পোনা মাছ উৎপাদন করা হচ্ছে। বিশেষ করে কার্প জাতীয় মাছের পোনা। অনেক মৎস্য চাষি এ হ্যাচারি থেকে পোনা মাছ সংগ্রহ করে মাছ চাষ শুরু করেছে। এ হ্যাচারির উৎপাদিত পোনা মাছ সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে কাপ্তাই হ্রদের মাছের ঘাটতিপূরণ করা সম্ভব হতে পারে।

সর্বশেষ খবর