শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

তৈরি ঘরের বাজার

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

তৈরি ঘরের বাজার

‘লোকে বলে বলেরে ঘর-বাড়ি ভালা না আমার, কি ঘর বানাইমু আমি শূন্যেরও মাঝার।’ হাসন রাজার এই আক্ষেপের পরও মানুষ ঘর বাঁধে, সংসার গড়ে। নতুন সংসার করতে নতুন ঘর তৈরি গ্রাম-বাংলার একটি ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় শত বছরের বেশি সময় ধরে রেডিমেড ঘর বিক্রি চলে আসছে। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বসছে ‘রেডিমেড ঘরের বাজার’। হোমনার পাশের কুমিল্লার মুরাদনগর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরেও এই রকম ঘরের বাজার বসে। হোমনা সদর, দুলালপুর, ঘাড়মোড়া, মাথাভাঙ্গা বাজারে রেডিমেড ঘর বিক্রি করা হয়। হোমনার ওই বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, দূর থেকে ঘরগুলো দেখে মনে হবে কেউ বুঝি নতুন বাড়ি করেছে। নতুন ঝকঝকে টিনের ঘর। তার ওপর নানা কারুকাজ। ঘরগুলো দেখে যে কেউই আকৃষ্ট হবেন। কাছে গেলে দেখা যাবে, কেউ কাঠের কাজ, কেউ টিনের কাজ করছেন। ক্রেতারা এসে সেগুলো দরদাম করছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, ৩০ হাত লম্বা এবং ২০ হাত প্রস্থের প্রতিটি ঘরের মূল্য আড়াই থেকে সাড়ে চার লাখ পর্যন্ত। ভালো টিন এবং কাঠের ওপর দাম বাড়ে-কমে। দুলালপুর বাজারের ঘর ব্যবসায়ী কুদ্দুস মিয়ার ঘর তৈরি করেন মিস্ত্রি জাকির হোসেন। তিনি জানান, সাতজন শ্রমিকের একটি ঘর তৈরি করতে ১৫ দিনের মতো সময় লাগে। মজুরি পান ৪০/৪৫ হাজার টাকা। এ এলাকায় ঘর তৈরির কাজ করে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে বলেও তিনি জানান।

দুলালপুর বাজারের কামাল মিয়া নামের একজন ঘর ব্যবসায়ী জানান, যে ঘর তিনি ক্রেতার নিকট সাড়ে তিন লাখ টাকা বিক্রি করেন, সেটা গ্রাহকের তৈরি করতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লাগবে। কারণ তিনি সমিলের ব্যবসা করেন, পাইকারি কাঠ ও টিন কিনতে পারেন। অন্যদিকে মিস্ত্রির খোঁজ, বাঁশ কাঠ জোগাড় করতে অনেক সময় লাগে ক্রেতার। সময় ও অর্থের সাশ্রয়ের জন্য মানুষ তৈরি করা ঘর ক্রয় করেন। ক্রয় করার পর ঘরগুলো খুলে ক্রেতারা ট্রাক বা ট্রাক্টরযোগে বাড়িতে নিয়ে যান। হোমনার বিভিন্ন গ্রামসহ, তিতাস, মেঘনা, মুরাদনগর ও বাঞ্ছারামপুরের লোকজন ঘরগুলো ক্রয় করেন।

রেডিমেড ঘরের ক্রেতা হোমনার ভিটি কালমিনা গ্রামের আলমগীর হোসেন জানান,     তিনি বিদেশ থেকে এসেছেন, আবার ফিরে যাবেন। একটি ঘর তৈরি করা প্রয়োজন। সময় কম, তাই তিনি বাজার থেকে একটি রেডিমেড ঘর কিনেছেন। হোমনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. আজিজুর রহমান মোল্লা বলেন, রেডিমেড ঘর বিক্রি হোমনা উপজেলার ঐতিহ্য। এই মাঝারি শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান। এসব ঘরের ক্রেতা এবং বিক্রেতা দুই পক্ষই লাভবান হচ্ছেন।

এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সবার সহযোগিতা করা প্রয়োজন। ব্যবসায়ীরা সহযোগিতা চাইলে উপজেলা প্রশাসন তাদের পাশে দাঁড়াবে বলেও তিনি জানান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর