শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

যারা আপনার সন্তানকে তুলে নিয়ে গেছে তাদের ভোট দেবেন না : মান্না

নিজস্ব প্রতিবেদক

যারা আপনার সন্তানকে তুলে নিয়ে গেছে তাদের ভোট দেবেন না : মান্না

গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনদের ফিরে পেতে সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ‘আমাদের কারও প্রতি কোনো অভিযোগ, অনুযোগ নেই। শুধু আমাদের পরিবারের সদস্যদের ফিরিয়ে দিন।’ গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘মায়ের ডাক’ প্রতিবাদী সমাবেশ থেকে এ প্রার্থনা জানান তারা। আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে ‘গুম হওয়া পরিবার’-এর পক্ষ থেকে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। স্বজনহারাদের অশ্রুভেজা বক্তব্যে পুরো অনুষ্ঠানস্থলে সৃষ্টি হয় এক শোকাতুর পরিবেশের। এ অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘যারা আপনার সন্তানকে তুলে নিয়ে গেছে, তাদের ভোট দেবেন না।’ গুমের শিকার সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘গুম হওয়া সব সন্তানকে তাদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিন। মায়ের সন্তান ফিরে আসুক মায়ের কোলে। আমাদের কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। শুধু চাই সন্তান ফিরে আসুক। সন্তান আসবে এ আশায় পথ চেয়ে বসে আছি।’ গুম হওয়া সুমনের বোন আফরোজা ইসলাম বলেন, ‘স্বজন হারানোর বেদনা বড় কষ্টের। দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকা আরও কষ্টের। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দিতে ব্যবস্থা নিন।’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘স্বজনহারা মানুষের কান্না কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কানে যায় না? অবশ্যই যায়। মানুষ গুম হচ্ছে এটিও সরকার জানে। তবু তারা কিছু করে না। সরকার বুঝেশুনেই গুম করছে মানুষ। এই মানুষেরা রাজনৈতিক কারণেই গুমের শিকার হয়েছে। তাই তাদের খুঁজে বের করতে সরকার উদাসীন।’

রাজনীতিতে গুমের চাষ জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না বলেন, ‘ঢাকার সব থানার ওসি যদি বলেন তারা রাজনৈতিক কাজে সরকারকে সহায়তা করবেন না, তবে সরকার থাকতে পারবে না। তাই বাহিনীর লোকদের বিরুদ্ধে তুলে নেওয়ার অভিযোগ থাকলেও বিচার হয় না।’ তিনি বলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে এই সরকার আগামীতে পুলসিরাত পার হতে (ক্ষমতায় যেতে) পারবে না। তাই ভয় দেখাতে গুমের নিবিড় চাষ করা হচ্ছে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এসব অন্যায়েরও প্রতিকার আছে।  যারা সন্তানদের কেড়ে নিয়েছে, স্বজনদের গুম করেছে, তাদের ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। মান্না বলেন, ‘সব অধিকারই তারা কেড়ে নিয়েছে। তাদের ভোট দেব না। যারা ক্ষমতায় গেলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেবে, তদন্ত করে গুম হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের খুনিদের খুঁজে বের করে শাস্তির আশ্বাস দেবে, তাদের ভোট দেব।’ মান্না বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে মানুষ গুম হচ্ছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এত বড় মিথ্যাচার করলে মানুষ তো তার পদত্যাগ চাইতেই পারে। জনগণের মুক্তির জন্য, হারানো স্বজনদের ফিরে পেতে সবাইকে একসঙ্গে লড়াই করার আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রেমের কারণে মানুষ গুম হয়ে যায়, ব্যবসায় বিফল হয়ে গুম হয়ে যায়, তাহলে স্বজনহারাদের পরিবার মামলা করতে গেলে থানায় মামলা নেওয়া হয় না কেন? গুমের সঙ্গে রাষ্ট্র সম্পৃক্ত না থাকলে অবশ্যই মামলা নেওয়া হতো। দেশে এমন পরিস্থিতি যে, কখন কাকে তুলে নেওয়া হবে কেউ বলতে পারে না।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, কেউ যদি প্রেম করে ব্যর্থ হয়ে বা ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে গুম হয়ে যায়, তবে তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। যদি তিনি খুঁজে বের করতে না পারেন, তবে মন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য একটি বাহিনী যখন বন্দুকযুদ্ধ করে, মানুষ খুন করে, তখন এ ব্যবস্থা দিয়ে ভালো কিছু সম্ভব না। তিনি বলেন, জনগণ এদের সঙ্গে নেই। তারাও জনগণকে পরোয়া করে না। তারা তাই ডান্ডা মেরে মানুষকে ঠাণ্ডা রাখতে চায়। দেশে যদি নির্বাচন না থাকে, তবে সরকার লাগামহীন হয়ে যায়। ভোটের অধিকার না থাকায় তারা এখন লাগামহীন। ভোটের অধিকার এ সরকারের কাছে আদায় করতে হবে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, এসব গুম-খুন হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। ভয় দেখাতে এসব করা  হচ্ছে, যাতে মানুষ রাস্তায় না নামে। ঐক্যবদ্ধ লড়াই করে গুম-খুন বন্ধ করে এদের বিদায় করতে হবে।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গুমের অধিকাংশ ঘটনার সঙ্গে সরকারের বাহিনী জড়িত। গুমসহ নানা ঘটনার বিচার না হলে ভবিষ্যতে ট্রাইব্যুনাল করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

সর্বশেষ খবর