মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

চা-সিগারেটের জন্য ভুটান থেকে ভারতে

শিমুল মাহমুদ, ভুটান থেকে ফিরে

ধূমপান কিংবা চা পানের জন্য এক দেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে অন্য দেশে যাওয়া ভাবা যায়? সেটাই ঘটছে ভুটান-ভারত সীমান্তে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার জয়গাঁও সীমান্তে এসে সিগারেট কিংবা চা পান করেন ভুটানে যাওয়া শত শত পর্যটক। ভুটানের সীমান্ত শহর ফুয়েন্টশোলিংয়ে যারা ধূমপান করেন তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত অংশে চলে আসেন। ধূমপান শেষ করে ফের ভুটান অংশে চলে যান। কারণ, ভুটানে পাবলিক প্লেসে ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কেউ যদি ধূমপান করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই জেল কিংবা বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয়। এ জন্য ভুটানের শহরগুলোতে সিগারেট পাওয়া যায় না। বাইরে থেকে সিগারেট নিলেও শতভাগ ট্যাক্স দিয়ে হোটেল রুমে কিংবা বাথরুমে খেতে হয়। ফলে ভুটানে ঢোকার পর বেশ বিপাকেই পড়তে হয় ধূমপায়ীদের। এ জন্য যারা সড়কপথে ভুটান যান তাদের অনেকেই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এসে চা কিংবা সিগারেট পান করেন। আসলে সীমান্ত বলতে যে বিষয়টা রয়েছে ভুটানে তা একেবারে নামে মাত্র। ভুটান ও ভারতের অংশ থেকে সবাই সীমান্ত পেরিয়ে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করছেন দুই দেশে। ভুটান সীমান্তে তিনটি গেট। রাজকীয় কারুকার্যময় সদর দরজা গিয়ে দুই দেশের যানবাহন চলাচল করে। এর পাশে আরও দুটি গেট রয়েছে। তার একটি দিয়ে ভুটানে ঢুকতে হয়। অন্যটি ভুটান থেকে বেরোবার পথ। দুটি গেটেই ভুটানের কালো পোশাকের রক্ষীরা আছেন। তাদের সামনে দিয়েই অবাধে লোকজন আসা-যাওয়া করে।    শুধু সিগারেটের জন্যই নয়। চা খেতেও অসংখ্য মানুষ ভুটান থেকে ভারতে আসে। কারণ, ভুটানের সীমান্ত শহর ফুয়েন্টশোলিংসহ কোনো শহরেই ভারত-বাংলাদেশের মতো ফুটপাথে চা কিংবা পান, বিড়ি, সিগারেটের দোকান নেই। ভুটানের ফুটপাথ পথচারীদের জন্য অবারিত। সেখানে দোকান বসানোর কোনো সুযোগ নেই। ২৪ আগস্ট দুপুরে ফুয়েন্টশোলিংয়ের হোটেল নামগেতে দুপুরের খাবার শেষে কোথাও চায়ের দোকান খুঁজে পাওয়া গেল না। আমাদের ভ্রমণ সঙ্গীদের একজন ডা. আতাউর রহমান বললেন, চলেন ইন্ডিয়া থেকে চা খেয়ে আসি। গেটের এপার থেকে ওপারে ভারতের জয়গাঁও দেখা যায়। নো ম্যানস ল্যান্ড বলেও কিছু নেই এখানে। আমরা ভুটান থেকে জয়গাঁও গিয়ে চা দোকান খুঁজতে থাকি। অবশ্য ভর দুপুরে খাবার সময় কোনো দোকানেই চা মিলল না। ভেতরে অজানা আতঙ্ক ছিল। আর যদি ভুটানে ঢুকতে না পারি। কারণ, পাসপোর্টসহ বাকি ৪১ সঙ্গী ছিল ভুটানে। সে রকম কিছুই ঘটেনি। বুক ফুলিয়ে আমরা আবার অন্য গেট দিয়ে ভুটান ঢুকে পড়ি। যেন মামা বাড়ি বেড়াতে এসেছি। ভুটানে ফিরেই অনেক দোকান খুঁজে চা খেতে হলো আমাদের।  ভুটান দেশটা পুরোটাই পাহাড়ের ওপরে। তাই প্রত্যেক মানুষকেই পাহাড়ের ওপর দিয়ে চলতে হয়। আর পাহাড়ে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। এ জন্য প্রতিটি বাসায় আপ্যায়নে মদের সঙ্গে দেওয়া হয় পান। তার সঙ্গে থাকে কাঁচা সুপারি। অ্যালকোহল শরীরকে ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচায়। একই সঙ্গে পানও শরীরকে উষ্ণ রাখে।

এ জন্য মদ ও পান এতটা প্রচলিত ভুটানে। ভুটানের সব শহরেই বিপুল সংখ্যক মদের দোকান। সব হোটেল রেস্তোরাঁতেও বার আছে। আর পান তো সর্বত্রই মেলে।

সর্বশেষ খবর