মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

এবার ঋণ মওকুফ চান ট্যানারি মালিকরা

পানির দরে কিনেছেন চামড়া

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

গত ঈদে পানির দরে কোরবানির পশুর চামড়া কেনার পর এখন সিইটিপি (কমন ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট) নির্মাণে বরাদ্দকৃত সরকারের টাকা মওকুফের আবদার জানিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। তারা বলছেন, চামড়াশিল্পে বর্তমানে বড় সমস্যা হলো মূলধনের অভাব। এ অবস্থায় সিইটিপি নির্মাণের টাকা মওকুফ করা হলে চামড়াশিল্প উপকৃত হবে। খোদ অর্থমন্ত্রীও ট্যানারি মালিকদের পক্ষে সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ মওকুফের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

চামড়াশিল্পের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিইটিপি নির্মাণে সরকার যে বরাদ্দ দিয়েছে সেই অর্থ মওকুফের দাবি জানান ট্যানারি মালিকরা। ২৬ আগস্ট ওই সভার কার্যবিবরণী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পাঠানো হলে তিনি তাতে নোট লিখেন, ‘সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে সিইটিপি নির্মাণে ব্যয়ের যথার্থ চিত্রটি তুলে ধরুন। এখানে হয়তোবা সিদ্ধান্ত বদলাতে হবে।’ জানা গেছে, চামড়াশিল্প নগরী স্থাপনে যে প্রকল্প গৃহীত হয়, একনেক কর্তৃক অনুমোদিত সেই প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের ক্ষতিপূরণ হিসেবে সরকার অনুদান দিয়েছে ২৬০ কোটি টাকা। সিইটিপি, ডাম্পিং ইয়ার্ড এসটিপি স্থাপনে বরাদ্দ প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা। আর অন্যান্য উন্নয়ন ব্যয় বাবদ বরাদ্দ প্রায় ১৯০ কোটি টাকা। প্রকল্পে বরাদ্দকৃত ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা থেকে ২৬০ কোটি টাকার অনুদান বাদ দিয়ে আর যে বাকি টাকা রয়েছে তার ২০ শতাংশ হিসেবে ১৬৪ কোটি টাকা ৫ শতাংশ সুদে ১৩ বছরে আদায় করা হবে ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে। বাকি ৮০ শতাংশ হিসেবে প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা বিনা সুদে দেওয়া হয়েছে। এখন ট্যানারি মালিকরা বলছেন, তাদের সরকার যে ২৬০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে তা কারখানা স্থানান্তরে চলে গেছে। এ অবস্থায় তারা সিইটিপি স্থাপনে যে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ তার পুরোটাই মওকুফ করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। সূত্র জানায়, ট্যানারি মালিকদের সুপারিশের কারণে এর আগেও সিইটিপি নির্মাণ ব্যয় বাবদ যে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা তার পুরোটাই অনুদান হিসেবে মওকুফের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ জানায় শিল্প মন্ত্রণালয়। ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর ওই টাকা অনুদান হিসেবে দেওয়ার বিষয়ে অপারগতা জানিয়ে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এখন অর্থমন্ত্রী উল্টো ট্যানারি মালিকদের দাবি-দাওয়া ও চামড়াশিল্পের সমস্যার বিষয়গুলো সমাধানের লক্ষ্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর কাছে আধা সরকারি চিঠি পাঠান। ওই চিঠি পেয়ে গত ৬ আগস্ট চামড়াশিল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করেন শিল্পমন্ত্রী। সভায় আমির হোসেন আমু বলেন, চামড়াশিল্প মালিকদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সিইটিপি নির্মাণের টাকা মওকুফের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বরাবর ডিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে অপারগতা জানিয়েছে। প্রয়োজনে আবারও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। তবে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত সিইটিপি নির্মাণের টাকাসহ প্লটের মূল্য আদায় করার পক্ষে তিনি মতামত দেন। এ বিষয়ে ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান শাহীন আহাম্মেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০০৩ সালে যখন প্রকল্পটি নেওয়া হয় তখন যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল সেখানে বলা ছিল সরকার সিইটিপি করে দেবে, আমরা শুধু রক্ষণাবেক্ষণ করব। এখন সংশোধিত প্রকল্পে সিইটিপি নির্মাণে যে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা, এটা তো অনেক বেশি। ২৫ হাজার কিউবিক মিটার ধারণক্ষমতার সিইটিপি ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ডে করা হলেও তিনশ কোটি টাকার বেশি লাগে না। আর এটা করেছে চাইনিজ কোম্পানি, এ ধরনের সিইটিপি করতে বড়জোর দুই থেকে আড়াইশ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। প্রকল্পটিতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় দেখানো হচ্ছে- এমন ইঙ্গিত দিয়ে বিটিএর চেয়ারম্যান প্রশ্ন করেন, আমরা কেন চুরির টাকা দিতে যাব?

সর্বশেষ খবর