সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ ভাঙচুর

গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে গতকাল এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। আন্দোলনরত কয়েক শ্রমিকের মৃত্যুর গুজবে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অবরোধ করে। উত্তেজিত শ্রমিকরা বেশ কিছু যানবাহন, কারখানা ও দোকানপাটসহ ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে  শ্রমিকদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ শটগানের গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয়দিকে অন্তত ২৫ কিলোমিটারব্যাপী যানজটের সৃষ্টি হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারখানা কর্তৃপক্ষ অন্তত অর্ধশত কারখানা গতকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করে। পুলিশ, আন্দোলনরত শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ডেগেরচালা এলাকার নিট অ্যান্ড নিটেক্স লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ঈদের আগে আগস্ট মাসের পাওনা বেতন ভাতার অর্ধেক পরিশোধ করে কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা অবশিষ্ট পাওনা পরিশোধের জন্য কয়েকদিন ধরে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল। সর্বশেষ শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এদিনও পরিশোধ করেনি। শ্রমিকরা বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে শনিবার কারখানায় কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা রাত ১০টার দিকে পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশের মধ্যস্থতায় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের আলোচনার পর শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ পাওনাদি পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেয়। এদিকে, শনিবার রাতে কারখানার সরবরাহ লাইনের পানি পান করে বেশ কয়েকজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর জের ধরে শ্রমিকরা গতকাল সকালে কারখানার গেটে এসে জড়ো হয়। কিন্তু তারা কাজে যোগ না দিয়ে গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে।

 এ সময় অসুস্থদের মধ্যে কয়েকজন শ্রমিক মারা গেছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে উঠে। শ্রমিকরা সকাল ১০টার দিকে কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় আশপাশের বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে এসে আন্দোলনরতদের সঙ্গে যোগ দেয়। এক পর্যায়ে তারা যানবাহনসহ আশপাশের বিভিন্ন কারখানা, দোকানপাট নির্বিচারে ভাঙচুর করতে থাকে। পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। এক পর্যায়ে পুলিশ পুলিশ শটগানের গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে বেলা আড়াইটার দিকে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শ্রমিক কালাম বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের পাওনা বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধের পাঁয়তারা করছিলেন। শ্রমিকদের যাতে বেতন না দিতে হয়, সেজন্য শ্রমিকদের দাবি দমন করতে কারখানা কর্তৃপক্ষ কৌশলে ট্যাংকের পানির সঙ্গে কিছু মিশিয়ে দেয়। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) গাছা থানার ওসি কাজী ইসমাইল হোসেন জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডেগেরচালা ও আশপাশের এলাকার প্রায় অর্ধশত কারখানা গতকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জিএমপি কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান বলেন, বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ মালিক ও শ্রমিক পক্ষকে একসঙ্গে করে একটা সমাধানের চেষ্টা করছেন। পানি পানে শ্রমিক অসুস্থ হলেও মৃত্যুর বিষয়টি পুরোপুরি গুজব।

সর্বশেষ খবর