মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
রামকৃষ্ণ মিশন ও ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রধানমন্ত্রী

সম্প্রীতিতে দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সম্প্রীতিতে দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রামকৃষ্ণ মিশনে শারদীয় দুর্গাপূজার মণ্ডপ পরিদর্শন করেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যার যার অধিকার নিয়ে বসবাস করছে। কারা সংখ্যায় বেশি, কারা সংখ্যায় কম, সেটা বড় কথা নয়। যে যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে। উৎসবের সঙ্গে, স্বাধীনভাবে পালন করবে। ধর্মীয় সম্প্রীতি স্থাপনে বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গতকাল বিকালে রাজধানীর টিকাটুলী রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ এবং লালবাগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে পৃথক শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রথমে  রামকৃষ্ণ মিশন ও পরে ঢাকেশ্বরীতে যান প্রধানমন্ত্রী। ঢাকেশ্বরীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা নিরাপদে যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবেন। প্রতিটি উৎসব আমরা সবাই এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পালন করি। মহান মুক্তিযুদ্ধে সব ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করে সবাই মিলে একসঙ্গে প্রিয় মাতৃভূমিকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলব। সেই লক্ষ্য নিয়েই সরকার পরিচালনা করে যাচ্ছি। আমরা চাই কোনো মানুষ গৃহহারা থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না, ক্ষুধার্থ থাকবে না।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলা নববর্ষকে নতুন চেতনায় নিয়ে এসেছি। এই দিনটাকে সবাই মিলে একসঙ্গে পালন করি। আমরা চেষ্টা করেছি, সব ধর্মের মানুষের সমস্যা সমাধান করার। তিনি বলেন, মুসলমান ধর্মের একটা নিয়ম আছে, বাবা-মা সন্তানকে সম্পত্তি দিতে গেলে হেবা করে দিতে পারে। এখানে কোনো ট্যাক্স দিতে হয় না, মাত্র একশ টাকা খরচে লিখে দিতে পারে। এটা হিন্দু ধর্মসহ অন্যান্য ধর্মে ছিল না। আমরা সেটা আইন করে দিয়েছি, হিন্দু সম্প্রদায় তাদের উত্তরাধিকারীকে সম্পত্তি দিতে পারবে ঠিক হেবা আইনে যেমন আছে। একশ টাকা মূল্যের খরচে লিখে দিতে পারবে। তিনি বলেন, আমরা মসজিদভিত্তিক যেমন গণশিক্ষা চালু করেছি, ঠিক মন্দিরভিত্তিকও ধর্মীয় শিক্ষা চালু করেছি। সেবায়েত-পুরোহিতদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যেক ধর্মের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছি। শেখ হাসিনা আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীন দেশ হিসেবে মর্যাদা অর্জন করেছি। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাকে হত্যা করা হলো। আমি হারালাম আমার মা, বাবা, ভাইসহ পরিবারের ১৮ জন্য সদস্য। ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে বিদেশে ছিলাম বলেই বেঁচে গিয়েছিলাম। স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে বিদেশে রিফিউজি হিসেবে বাস করতে হয়েছিল। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ আমাকে সভানেত্রী করে, তখন শত বাধা নিয়েই দেশে এসে শত বাধার মুখে পড়লাম। তখন দেশে সংঘাতপূর্ণ অবস্থা ছিল। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন করেছিল। মানুষের ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন হয়নি। শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত হানতে দেখেছি, ধর্মীয় নেতা, আমাদের দলের নেতা-কর্মী কেউ রেহাই পেত না। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সবাই মিলে দেশ স্বাধীন করেছি। সবাই মিলেই গড়ে তুলব। কিন্তু সে চেতনা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে বলেই আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে পেরেছি। সব ধর্মের মানুষ নিরাপদে ধর্ম পালন করছে। পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে বলেই মানুষ নিরাপদে পূজা পালন করতে পারছে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জায়গা নিয়ে একটা সমস্যা ছিল, আমরা তারও সমাধান করেছি। এর আগে বিকাল সাড়ে ৩টায় রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে পূজা পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ-প্রবাসের হিন্দু সম্প্রদায়কে শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আজকের দিনে এখানে আসতে পেরে সত্যিই আমি খুশি। আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) দেশের বাইরে যাচ্ছি। কাজেই চিন্তা করলাম, যাওয়ার আগে অন্তত আপনাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে যাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশে যে যার অধিকার নিয়েই বসবাস করবে। বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, সবাই ভাই-বোনের মতো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উৎসব পালন করে যাই। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হবে এটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। আমরা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি। রামকৃষ্ণ মিশনে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ। অনুষ্ঠানে রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের স্বামীজী ধ্রুবাবেশানন্দ প্রধানমন্ত্রীর হাতে শারদীয় শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, আওয়ামী লীগের ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

যুবলীগ দক্ষিণের ব্যাপক শোডাউন : ঢাকেশ্বরী ও রামকৃষ্ণ মিশনে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ব্যাপক শোডাউন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ।

সর্বশেষ খবর