মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সুসজ্জিত খেলার মাঠ ও পার্ক পাচ্ছে ঢাকাবাসী

দুই সিটি করপোরেশনের প্রকল্প থাকছে ব্যায়ামাগার নামাজের স্থান ফোয়ারা পাবলিক টয়লেট ওয়াকওয়ে ও সাধারণ গ্যালারি

জিন্নাতুন নূর

সুসজ্জিত খেলার মাঠ ও পার্ক পাচ্ছে ঢাকাবাসী

পার্কজুড়ে থাকবে ফলদ বৃক্ষ। মৌসুমে সেখানে শোভা পাবে সোনালু, জারুল আর কৃষ্ণচূড়া ফুলের গাছ। পার্কের ঠিক মাঝখানে থাকবে টলটলে পুকুর। আর পুকুরের পাশ ঘেঁষে একটি ঝুলন্ত কাঠের হাঁটাপথ বা ডেক। এর নাম হবে ‘গোস্বা ডেক’। পার্কের দুই পুকুরঘাটের নাম দেওয়া হবে ‘সঞ্চয়িতা’ ও ‘গীতাঞ্জলি’। রাজধানীর গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ পার্কের সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ শেষে এসব সুযোগ-সুবিধা পাবেন নগরবাসী। পার্কটির উন্নয়নে বিশেষজ্ঞরা যে নকশা তৈরি করেছেন সেখানে এইসব খুঁটিনাটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। উল্লেখ্য, নগরবাসীকে বিনোদন ও উন্নত সেবা দিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নগরীর বেশ কয়েকটি পার্ক ও খেলার মাঠ সংস্কার ও উন্নয়নের কাজ করছে। এরই মধ্যে অনেকগুলোর কাজ শুরু হয়েছে। কিছু শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী দুই-এক বছরের মধ্যে নগরবাসী এর সুফল ভোগ করতে পারবেন। জানা যায়, উত্তর সিটি করপোরেশনের বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ পার্কের চারপাশে সাধারণের জন্য থাকবে হাঁটাপথ, আলাদা সাইকেল লেন, একটি বাস্কেটবল গ্রাউন্ড। নারীদের জন্য বিশেষ স্থাপনা, ব্যায়ামাগার, নামাজের স্থান, ফোয়ারা, পাবলিক টয়লেট, শিশুদের খেলার ব্যবস্থা, খাবারের দোকান, উন্মুক্ত মঞ্চ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উন্মুক্ত স্থানসমূহের আধুনিকায়ন, উন্নয়ন এবং সবুজায়ন প্রকল্পের আওতায় ভিত্তি স্থপতিবৃন্দ লিমিটেড ঢাকার ২৬টি খেলার মাঠ এবং চারটি পার্কের সংস্কার ও নকশা প্রণয়নের কাজ করছে। এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ২৮০ কোটি টাকা। বর্তমানে তিনটি পার্কের নির্মাণকাজ চলছে। ২০২০ সালের জুনে এর কাজ শেষ হবে। আর বাকিগুলোর টেন্ডার কার্যক্রম কিছুর চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং কিছু আগামী মাসে আহ্বান করা হবে। এ ছাড়া বনানীর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন পার্কের উন্নয়ন কাজও চলছে। বনানীর এই পার্কটির নকশা নারী ও শিশুদের বিষয়টি মাথায় রেখে করা হয়েছে। এই পার্কে শিশুদের খেলনা স্থাপন, খেলাধুলার জন্য স্থান, নারীদের জন্য পৃথক বসার ব্যবস্থা, সাইকেল ট্র্যাক, ওয়াকওয়ের ব্যবস্থা থাকবে। এর বাইরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড খেলার মাঠ ও তাজমহল পার্কের আধুনিকায়ন কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে তাজমহল পার্কে ফোয়ারা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। পার্কের প্রবেশমুখ নির্মাণসহ অন্যান্য কাজও চলছে। দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে এই পার্কের আধুনিকায়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের শেষের দিকে। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ পার্কটির আধুনিকায়ন ও নকশা প্রণয়নকারী সংস্থা ভিত্তি স্থপতিবৃন্দের পরিচালক ইকবাল হাবিব গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতিটি পার্ক হবে নারীবান্ধব, দরিদ্র ও প্রতিবন্ধীদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। এর মধ্যে সাহাবুদ্দিন পার্ক হবে নারীবান্ধব পার্ক। এতদিন এই পার্কগুলো দখলে থাকায় অনেকে সেখানে ক্লাব বা অন্য স্থাপনা করতে চেয়েছিল। তাদের দখল থেকে বের করে এনে সংস্কার কাজ শুরু করা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জের। উন্নত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘জল সবুজে ঢাকা’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর আওতায় রাজধানীর পরিত্যক্ত ১৯টি পার্ক ও ১২টি খেলার মাঠ নিয়ে মোট ৩১টি খেলার মাঠ ও পার্ককে সুসজ্জিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় আছে ছোট ও বড়দের জন্য আলাদা খেলার মাঠ। পরিবার নিয়ে বেড়ানোর জন্য সুদৃশ্য স্থান ও জলাধার। এই পার্ক ও খেলার মাঠগুলোতে থাকবে সিসিটিভি, ফ্রি ওয়াইফাই ও সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা। আগামী বছরের মধ্যে পার্কগুলোর কাজ শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। দক্ষিণের যে পার্ক ও মাঠগুলোর সংস্কার হবে সেগুলো হচ্ছে— ওসমানী উদ্যান, পান্থকুঞ্জ, হাজারীবাগ পার্ক, যাত্রাবাড়ী পার্ক, গুলিস্তান পার্ক, শরাফতগঞ্জ পার্ক, মতিঝিল পার্ক, সাদেক হোসেন খেলার মাঠ, কলাবাগান মাঠ, বাসাবো খেলার মাঠ, গোলাপবাগ মাঠ, সিরাজউদ্দৌলা পার্ক, শিক্কাটুলি পার্ক, মালিটোলা পার্ক, বংশাল পার্ক, বাংলাদেশ মাঠ, দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, রসুলবাগ শিশু পার্ক, বশিরউদ্দিন পার্ক, আমলিগোলা পার্ক, শহীদ আবদুল আলিম খেলার মাঠ, ধানমন্ডি ৩ নম্বর গেট পার্ক, বকশিবাজার পার্ক, জগন্নাথ সাহা রোড পার্ক, শহীদ নগর মিনি স্টেডিয়াম, বালুরঘাট খেলার মাঠ ইত্যাদি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের আশা ২০২০ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন জানান, নগরীর পার্ক এবং খেলার মাঠগুলো বেদখল হয়ে গিয়েছিল। আমরা এগুলো দখলমুক্ত করে তা আধুনিক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নাগরিকদের বিনোদনের জন্য জল-সবুজে ঢাকা প্রকল্প গ্রহণ করি। এই প্রকল্পে কাজ করছেন ৭০ জন স্থপতি। ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ জানান, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। নারী, শিশু, বয়স্ক সবার জন্য এসব মাঠে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব পার্কে গাছ লাগিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে। এরই মধ্যে পার্কের নকশা প্রণয়ন হয়েছে। শুরু হয়েছে সংস্কার কাজও। রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্কে শুরু হয়েছে নির্মাণকাজ। শহীদ আবদুল আলিম খেলার মাঠের ভিতরও কংক্রিটের বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। বংশাল পার্কটিতে থাকবে ওয়াকওয়ে, সবুজ ঘাসের স্তর, বসার সিট, লাইট, কফি শপ, ভাস্কর্য ও শিশুদের খেলার জোন। আর গোলাপবাগ মাঠে থাকবে ভিআইপি গ্যালারি, জিম, ক্রিকেট মাঠ, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, ফুটবল মাঠ, বাস্কেটবল ও টেবিল টেনিস কোর্ট, সাধারণ গ্যালারি, নারী-পুরুষের জন্য টয়লেট, ক্লাব, অপেক্ষাগার, ব্যায়াম সরঞ্জাম, নিরাপত্তা কক্ষ, স্টোর রুম, দোকান ইত্যাদি।

সর্বশেষ খবর