মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নৌবাহিনীকে আরও আধুনিক করা হবে

ঢাকায় ঘাঁটি উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিশেষ প্রতিনিধি

নৌবাহিনীকে আরও আধুনিক করা হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বনৌজা শেখ মুজিবের কমিশনিং, নেভি মিউজিয়াম, মেরিটাইম ওয়ার্ল্ড ও ২২টি বহুতল ভবনের উদ্বোধন করেন —বাসস

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ নৌঘাঁটি হিসেবে ‘বিএনএস শেখ মুজিব’-এর কমিশনিং করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এই প্রথম কোনো নৌঘাঁটির কমিশনিং করা হলো। এ সময় তিনি নৌবাহিনীর কর্মকর্তা, নাবিক ও বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের বসবাসের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা অঞ্চলে ২২টি নবনির্মিত বহুতল ভবন উদ্বোধন করেন। গত ১০ বছরের প্রচেষ্টায় নৌবাহিনী একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে আবার ক্ষমতায় এলে এ বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তার। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে নৌবাহিনীর জন্য প্রথম আধুনিক ফ্রিগেড কিনেছিলাম। নৌবাহিনীকে আরও উন্নত কীভাবে করা যায় তার পদক্ষেপ আমরা নিয়েছিলাম এবং নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনাও তখন থেকেই আমাদের ছিল। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, বানৌজা শেখ মুজিব ঘাঁটি নিজস্ব অপারেশনাল কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জনকল্যাণ এবং জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, ঢাকা নৌঅঞ্চলে নৌবাহিনী সদর দফতর, একটি ছোট ঘাঁটি ব্যতীত আর কোনো স্থাপনা আগে ছিল না। কাজেই ২০০৯ থেকে ২০১৮ এই সময়ের মধ্যে এই নৌবাহিনীকে বিভিন্নভাবে আমরা শাক্তিশালী করেছি এবং আন্তর্জাতিক মানের উপযুক্ত করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে যদি আমরা আবার ক্ষমতায় আসতে পারি, নিশ্চয়ই আমরা এই নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলব, সেই লক্ষ্য আমাদের রয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, বানৌজা শেখ মুজিব ঘাঁটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল। এ অনুষ্ঠান থেকেই টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা অঞ্চলে নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ ও আবাসিক ব্যবহারের জন্য ২২টি বহুতল ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া সাভারে বিএন টাউনশিপের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। সাভারে চীনা কোম্পানি এই বিএন টাউনশিপ নির্মাণ করবে। এর আওতায় ১০টি ২৭তলা এবং ১২টি ২৬তলা অত্যাধুনিক সুবিধা সংবলিত আবাসিক ভবন নির্মিত হবে। শেখ হাসিনা যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে সম্পদের অপর্যাপ্ততার কথা স্মরণ করে বলেন, সীমিত সম্পদের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই এই নৌবাহিনী গড়ে ওঠে। এমনকি ’৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নৌবাহিনীর বৃহত্তম প্রশিক্ষণ ঘাঁটি বানৌজা ঈশা খান কমিশনিং করেন এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে  নেভাল এনসাইন প্রদান করেন। একই সময়ে তিনি দেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য ১৯৭৪ সালে ‘দি টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অব মেরিটাইম  জোনস অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেন, যা জাতিসংঘ করেছিল ১৯৮২ সালে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা চেয়েছেন দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করতে এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক করতে। প্রধানমন্ত্রী সকালে বানৌজা শেখ মুজিব ঘাঁটিতে পৌঁছালে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন আহমেদ তাকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে বানৌজা শেখ মুজিবের কমান্ডিং অফিসার মইনুদ্দিন মালিক প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কমিশনিং ফরমান গ্রহণ করেন। পরে তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা অঞ্চলের নৌ কমান্ডার, কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিভিন্ন ঐতিহাসিক অর্জন নিয়ে লেখা ‘বাংলাদেশ নেভি ইন দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, এমপিবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর